 
                  
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের জন্য নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এই নির্দেশিকাটি বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর সম্ভাবনাকে ध্যানে রেখে তৈরি করা হয়েছে। স্টারলিংক হলো ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের অধীনে একটি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী যা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে।
নির্দেশিকার প্রধান বিন্দুগুলো হলো:
আইনানুগ আড়ি পাতার সুযোগ:
নির্দেশিকায় ২৬(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত জাতীয় সংস্থার প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ‘গেটওয়েতে’ প্রবেশাধিকার প্রদান করতে হবে এবং আইনানুগ আড়ি পাতার ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে লাইসেন্সধারী সরকারের নির্ধারিত সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য প্রদান করতে হবে।
গেটওয়ে সিস্টেম:
লাইসেন্সধারী সেবা দেওয়ার আগে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে অন্তত একটি ‘গেটওয়ে সিস্টেম’ স্থাপন করতে হবে।
বিটিআরসি লাইসেন্সধারীকে বাড়তি গেটওয়ে স্থাপন করতে উৎসাহিত করে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ব্যবহারকারীর কার্যক্রম ও পরিবেশন স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে হতে হবে।
আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ডেটা ট্র্যাফিক:
লাইসেন্সধারীকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
আবেদন ও লাইসেন্স ফি: লাইসেন্স নেওয়ার আবেদন ফি ৫ লাখ টাকা, লাইসেন্স নেওয়ার ফি ১০ হাজার মার্কিন ডলার (১২ লাখ টাকার কিছু বেশি) এবং বার্ষিক নিবন্ধন ফি ব্রডব্যান্ড সেবার জন্য ৩০ হাজার ডলার (প্রায় ৩৭ লাখ টাকা) এবং আইওটির জন্য ১০ হাজার ডলার (১২ লাখ টাকার কিছু বেশি)।
রাজস্ব ভাগাভাগি: সেবাদাতাকে প্রথম দুই বছর বিটিআরসির সঙ্গে কোনো রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হবে না। তবে তৃতীয় বছর থেকে ৩ শতাংশ হারে এবং ষষ্ঠ বছর থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হবে।
লাইসেন্সের সময়কাল:
আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং তাদের কার্যক্রম চালাতে হবে অন্তত ৫ বছর।
সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া: অধিকারকর্মীরা আড়ি পাতার টেলিযোগাযোগে বিরোধী। তবে কেউ কেউ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রয়োজনে সুনির্দিষ্টভাবে আড়ি পাতার সুযোগ রাখার ক্ষেত্রে আপত্তি দেখান না।
বি এম মইনুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক, বলেন যে আড়ি পাতার সুযোগ রাখতে হলে সেটার জন্য স্পষ্ট নীতি থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন যে, দেশীয় আইআইজি থেকে ব্যান্ডউইডথ নিলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষমতা সরকার হাতেই থাকবে এবং ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে সরকারকে বক্তব্য স্পষ্ট করতে হবে।
বিটিআরসির নতুন নির্দেশিকা স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পথ প্রদান করেছে, যা বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর সম্ভাবনাকে খোলে। তবে, আড়ি পাতার সুযোগ রাখতে হলে স্পষ্ট নীতি থাকতে হবে এবং সরকারকে ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিতে হবে।

 
                         
         
         
        