 
                  Stratheia-র বিশ্লেষণভিত্তিক প্রতিবেদন তুলে ধরে কীভাবে বাংলাদেশের শীলখালি করিডোর যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মিয়ানমারবিরোধী প্রোক্সি যুদ্ধের একটি সম্ভাব্য ঘাঁটিতে পরিণত হতে পারে। কৌশলগত লজিস্টিক, গোপন জোট এবং ARSA সম্পর্কিত উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার ইঙ্গিত মিলছে।
ঢাকা, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ — শীলখালি করিডোর নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণার ঠিক তিন দিন আগেই পাকিস্তানের কৌশল-নির্ভর গবেষণা প্রতিষ্ঠান Stratheia একটি উদ্বেগজনক প্রশ্ন তোলে: “বাংলাদেশ কি মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে মার্কিন সমর্থিত প্রোক্সি যুদ্ধে জড়াচ্ছে?” সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অবস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাপূর্ণ উপস্থিতি এবং রাখাইন রাজ্যে বিদ্যমান বিদ্রোহীদের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বিশ্লেষণ করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
১. বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ
Stratheia-র রিপোর্ট অনুযায়ী, রাখাইনের শক্তিশালী বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি (AA) এবং চীনা-জাতিভিত্তিক চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (CNF) বাংলাদেশে খাদ্য, চিকিৎসা এবং বাণিজ্যিক সহায়তার অনুরোধ জানায়। যদিও বাংলাদেশ সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সহযোগিতা অনুমোদন করেনি, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি ইঙ্গিত দেন যে সীমান্ত নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে AA-এর সঙ্গে যোগাযোগ হতে পারে।
২. শীলখালি করিডোর: কৌশল নাকি মানবিকতা?
শীলখালি করিডোরকে সরকারিভাবে একটি মানবিক সহায়তা করিডোর হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও, সামরিক কৌশলবিদরা একে সাপ্লাই হাব হিসেবে উল্লেখ করছেন—বিশেষত বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও লজিস্টিক সরবরাহের জন্য। করিডোরটি বাংলাদেশের আর্টিলারি ফায়ারিং রেঞ্জের পাশে অবস্থিত; যেখানে তুর্কি ফিল্ড গান, ATGM এবং UAV পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকায় উদ্বেগ
- শীলখালি করিডোর প্রকল্প ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের USARPAC (U.S. Army Pacific Command) জড়িত।
- কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন হচ্ছে তুর্কি ড্রোন অপারেশনের জন্য।
- যুক্তরাষ্ট্রের তিন কূটনীতিক—সুসান স্টিভেনসন, নিকোল চুলিক, এবং অ্যান্ড্রু হেরাপ সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন।
Stratheia দাবি করে, ঢাকায় গোপন বৈঠকে AA ও CNF প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে তারা আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (ARSA)-এর সঙ্গে জোট গঠনে অনীহা জানায়।
৪. ARSA প্রধানের গ্রেপ্তার ও কূটনৈতিক সংকেত
ARSA প্রধান আতা উল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি, যিনি ২০১৭ সালের রাখাইনে হামলার মূল অভিযুক্ত, সম্প্রতি ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। ধারণা করা হচ্ছে, AA ও CNF-এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতার অংশ হিসেবে এই গ্রেপ্তার সংঘটিত হয়েছে।
৫. বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা
প্রফেসর ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, ১০ম, ১৭তম ও ২৪তম ডিভিশন সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেবে না—তবে লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করবে। এর অর্থ, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অপারেশনে বাংলাদেশের ভূমিকা নিষ্ক্রিয় অথচ পরোক্ষভাবে জড়িত।
৬. প্রক্সি যুদ্ধের লক্ষ্য ও আন্তর্জাতিক কৌশল
এই প্রক্সি যুদ্ধের মূল লক্ষ্য:
- রাখাইন রাজ্যে AA ও CNF গেরিলাদের সহায়তা করা,
- মিয়ানমার জান্তার নেতা মিন অং হ্লাইং সহ ৬ কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করা,
- আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে বিচার নিশ্চিত করা।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে NUG (National Unity Government)-এর সঙ্গে মিলিতভাবে মিয়ানমারের ভূখণ্ডের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে Stratheia দাবি করে।
বিশ্লেষণ: বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে?
বাংলাদেশের ভূমিকা এখন এক জটিল কূটনৈতিক ক্রসফায়ার-এর মধ্যে। একদিকে রয়েছে মানবিক দায়িত্ব ও সীমান্ত নিরাপত্তা, অন্যদিকে রয়েছে বৃহৎ শক্তির ভূরাজনৈতিক যুদ্ধ। শীলখালি করিডোর হয়তো সাময়িকভাবে একটি মানবিক উপস্থাপনা, তবে এর আড়ালে একটি দুর্দান্ত প্রক্সি যুদ্ধের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে—যেখানে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হতে নাও পারে।
এই করিডোর প্রকল্পটি এখন বিতর্কের কেন্দ্রে—এটি কি শুধুই মানবিক সহায়তা, নাকি আসন্ন আঞ্চলিক প্রোক্সি যুদ্ধের ভূমিকা?

 
                         
         
         
        