সাংবাদিক ইলিয়াসের একটি মন্তব্য ধর্মীয় উস্কানি ও জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননার -দেশের ঐক্য ও স্থিতিশীলতার জন্য কতটা হুমকি?

সম্প্রতি সাংবাদিক ইলিয়াস একটি উস্কানিমূলক মন্তব্য করে সামাজিক মাধ্যমে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। তার বক্তব্য ছিল—
“যদি হিন্দুদের দেব-দেবী পূজা করতে না চান, তাহলে যেসব জায়গায় এখনও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হচ্ছে সেটা বন্ধ করুন!”
এই বক্তব্য শুধুমাত্র অপ্রাসঙ্গিকই নয়, বরং এটি স্পষ্টভাবে ধর্মীয় বিভেদ উসকে দেওয়ার কৌশল। ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে জাতীয় গৌরবকে টেনে এনে যে ধরনের মনোভাব তিনি তুলে ধরেছেন, তা জাতির ঐক্য, সংহতি ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির প্রতি অবমাননাকর।
জাতীয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা” শুধু একটি গান নয়—এটি বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের গর্ব, প্রতীক ও হাজার বছরের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রতিচ্ছবি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই সৃষ্টি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়, মুক্তিযুদ্ধ এবং বহু ধর্ম-বর্ণের মানুষের সম্মিলিত ইতিহাসকে ধারণ করে। এটি মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল নাগরিকের জন্য গর্বের বিষয়।
বাংলাদেশের সংবিধান বলছে, রাষ্ট্রে সব ধর্মের সমান অধিকার রয়েছে। একজন সাংবাদিক হিসেবে ইলিয়াসের দায়িত্ব ছিল সমাজে ঐক্য, সহনশীলতা ও শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু তার মন্তব্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভেদমূলক।
ধর্মীয় উস্কানি কেবল সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে না, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়ে। এই ধরনের মন্তব্য ধর্মকে রাজনীতিকরণ করে এবং উগ্রবাদী চিন্তাকে উস্কে দেয়।
জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা মানে দেশের মূল চেতনার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছোড়া। এ ধরনের বক্তব্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং জাতির মূল আদর্শ—ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহাবস্থানের—বিপরীত সুর সৃষ্টি করে।
🔹 সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে মিডিয়া ও নাগরিকদের উচিত এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হওয়া
🔹 সরকারকে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে এ ধরনের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি না ঘটে
🔹 শিক্ষা ও গণসচেতনতায় জোর দিয়ে ধর্ম ও রাষ্ট্রের ব্যবধান বোঝানো প্রয়োজন
আমরা সবাই মিলে যদি এই ধরনের উস্কানির বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই, তবে আমাদের সমাজে ক্রমাগত বিভেদ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্য রক্ষায় এখনই সময় এক হয়ে দাঁড়াবার। সাংবাদিকতা হোক সত্য ও ন্যায়ের প্রতিচ্ছবি—উস্কানির নয়।
