মোংলা বন্দরে আবারো ডাকাতি, এমভি সেঁজুতি নামের বাংলাদেশি জাহাজে হাত-পা বেঁধে ডাকাতি, ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট। প্রশ্ন উঠছে বন্দর নিরাপত্তা নিয়ে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলায় বারবার ডাকাতির ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। সর্বশেষ, বাংলাদেশি পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘এমভি সেঁজুতি’-তে ডাকাতির ঘটনা সেই নিরাপত্তাহীনতার চিত্র আরও উন্মোচন করেছে।
সোমবার (২৬ মে) ভোররাতে পশুর নদীর মোংলা বন্দর চ্যানেলে নোঙর করা অবস্থায় ডাকাত দলের হামলার শিকার হয় পিএনএন শিপিং লাইন্সের মালিকানাধীন এ জাহাজটি। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ১৪ জনের একটি দল ফিশিং ট্রলারে করে এসে জাহাজে প্রবেশ করে। চিফ অফিসার মো. সিরাজুল হক জানিয়েছেন, তারা সাতজন নাবিককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়।ডাকাতরা নিয়ে যায় ইঞ্জিন বেয়ারিং, জ্বালানি তেল, ওয়ার রোফ, পণ্য পরিবহন যন্ত্রাংশ এবং ব্যক্তিগত ৭টি মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল। মারধরের কারণে আহত হন তিন নাবিক।
এক বছর ধরে অচল জাহাজ, নজরদারির ঘাটতি কেন?
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এমভি সেঁজুতি ভারত থেকে পাথর নিয়ে এসে গত বছরের ২২ জুন মোংলায় পৌঁছালেও, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি এখনও চ্যানেলে অবস্থান করছে। ফলে দীর্ঘ সময় অচল এই জাহাজ যেন পরিণত হয়েছে ডাকাতদের সহজ টার্গেটে।
আল সাফা শিপিং লাইন্সের খুলনা অফিসের ম্যানেজার শরিফ জাহাদুল করিম অমিত জানিয়েছেন, এর আগে আরও দু’দফা ডাকাতি হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক বছর ধরে নদীতে থাকা জাহাজটির নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা বন্দরের ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।ডাকাতির পরিপ্রেক্ষিতে কোস্টগার্ড পশ্চিম অঞ্চলের গোয়েন্দা ইউনিট তদন্ত ও মালামাল উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন অর রশীদ। তবে, এটি শুধু প্রতিক্রিয়া পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না থেকে, নিয়মিত নজরদারি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মাকরুজ্জামান মুন্সী জানান, তারা ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।
জাতীয় রাজস্ব, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং মেরিটাইম নিরাপত্তা—এই তিন গুরুত্বপূর্ণ দিক মোংলা বন্দরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু বারবার ডাকাতির ঘটনা প্রমাণ করে, বন্দরে দায়িত্বরত বাহিনী ও কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা ও গাফিলতি রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে—দীর্ঘ এক বছর ধরে পশুর নদীতে পড়ে থাকা একটি বড় আকারের বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা কি শুধুই প্রযুক্তিগত, নাকি এর পেছনে আছে নীতিনির্ধারণী দুর্বলতা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোংলা বন্দরে আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা, সিসিটিভি কভারেজ, এবং নৌপথে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা না করা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।

 
                         
         
         
        