 
                  নিক্কেই ফোরামে বক্তব্য দিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপিকে কড়া বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। জানালেন, সব দল নয়, একটি দলই নির্বাচন চায়। বিশ্লেষণ করেছে আমাদের প্রতিবেদক।
নির্বাচন ঘিরে দেশে-বিদেশে যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, তখনই টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে অনুষ্ঠিত নিক্কেই ফোরাম ২০২৫-এর মঞ্চে উঠে এসে এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
একদিকে তিনি রাজনৈতিক নির্লিপ্তির বার্তা দিয়েছেন, অন্যদিকে চিহ্নিত করে দিয়েছেন মূল রাজনৈতিক চাপদাতাদের—“সব দল নয়, ডিসেম্বর একটি দলই নির্বাচন চায়।”
এই বক্তব্যের লক্ষ্য যে বিএনপি এবং তার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কারণ, তারেক রহমান সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকার পতনের মাধ্যমে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছেন।
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য আসলে দুই স্তরে পড়া প্রয়োজন। প্রথমত, তিনি নিজেকে ‘অরাজনৈতিক’ দাবি করে বিদেশি বিনিয়োগ ও সহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, দেশীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা বিএনপির কৌশলের বিরুদ্ধে একধরনের আন্তর্জাতিক জবাব দিয়েছেন।
ড. ইউনূস বলেন, “সংস্কার তাড়াহুড়ো হবে যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়। আর ছয় মাস বেশি পেলে সংস্কার অর্থবহ হবে।” এই বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্ট যে, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল পরিকল্পনা হচ্ছে সময় নিয়ে ‘প্যারালাল রিফর্ম’ চালানো—যা একদিকে প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠন, অপরদিকে রাজনৈতিক ভারসাম্য স্থাপন।
ডিসেম্বরের নির্বাচন চাইছে বিএনপি, এর পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমর্থন এবং দেশীয় অস্থিরতা জিইয়ে রাখার চাপ।
অন্যদিকে ড. ইউনূস ও তার উপদেষ্টামণ্ডলী চান অন্তত ৬ মাস সময়, যাতে প্রশাসনিক ও নির্বাচনি কাঠামোকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করে তোলা যায়।
এই দ্বন্দ্ব আসলে সময় নিয়েই—কখন নির্বাচন হলে কোন পক্ষ সুবিধাজনক জায়গায় থাকবে।
ডিসেম্বরে নির্বাচন মানেই বিএনপির কাঙ্ক্ষিত সময়রেখা, যেখানে বর্তমান সরকারকে সরিয়ে তড়িঘড়ি নির্বাচনের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।
ইউনূসের ৬ মাস মানে হবে জুন ২০২৬—যা বর্তমান সংলগ্ন সরকারকে সংস্কার বাস্তবায়নের সময় দেবে এবং বিএনপির আন্দোলনের গতি কমিয়ে দেবে।
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনে জাপানসহ এশীয় দেশের সহযোগিতা কামনা করেন। এ অংশটুকু কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বটে। জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত—এই চারটি দেশ বর্তমানে বাংলাদেশের উপর প্রতিযোগিতামূলক প্রভাব রাখতে চায়।
ইউনূস এই ফোরামে সেই ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে ‘সহযোগিতায় রূপান্তর’-এর বার্তা দিয়ে চতুর কূটনৈতিক খেলায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
তারেক রহমানের জন্য এই বার্তা স্পষ্ট—আন্তর্জাতিক মঞ্চেও এখন একটি প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে, যিনি সরাসরি বলেন, “সব দল নয়, একটি দলই নির্বাচন চায়।”
এই মন্তব্যে জাতির সামনে নতুন প্রশ্ন উঠে এসেছে—ডিসেম্বরে কি সত্যিই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন সম্ভব, না কি এটি কেবল বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল?
ড. ইউনূস হয়তো নিজেকে ‘অরাজনৈতিক’ বলছেন, কিন্তু তাঁর ভাষা, বার্তা ও সময় নির্বাচনের পেছনে রয়েছে একদমই রাজনৈতিক ক্যালকুলেশন।
বিএনপির জন্য এখন সময় এসেছে নতুন কৌশল নির্ধারণের—কারণ আন্তর্জাতিক মঞ্চেও এখন মাঠে আছেন একজন “সুশীল শাসক”।

 
                         
         
         
        