রাজধানীর দারুসসালামে দুই যুবককে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং এটি ঢাকার সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সংকেত বহন করছে। বিশ্লেষণ করলেন আমাদের প্রতিবেদক।

৩১ মে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালামের আহমদ নগরের হাড্ডিপট্টি এলাকায় ঘটে এক ভয়াবহ ঘটনা। দুই অজ্ঞাত যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয় জনসমক্ষে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ বছর।
এখনো তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। দারুসসালাম থানার ওসি রকিবুল হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে তদন্ত চলছে এবং হত্যার কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশের নগর জীবনে, বিশেষত রাজধানী ঢাকায় সহিংসতা, গণপিটুনি ও বিচারবহির্ভূত নিপীড়নের ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে একসঙ্গে দুই তরুণের এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে:
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কি একমাত্র দায়ী? গণপিটুনির প্রবণতা কি বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার ফল? এই সহিংসতা কি রাজনৈতিক বা মাদক সংশ্লিষ্ট কোনো সংঘাতের বহিঃপ্রকাশ?
বাংলাদেশে বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতিগ্রস্ততা এবং অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা সাধারণ মানুষকে প্ররোচিত করছে নিজ হাতে শাস্তি দিতে। ফলে, অনেক সময় সন্দেহভাজনদের পুলিশে না দিয়ে রাস্তায় মেরে ফেলা হয়। তবে এই প্রবণতা শুধু ন্যায়বিচারকে প্রতিহত করছে না, বরং সমাজকে আরও সহিংস ও অস্থির করে তুলছে।
রাজধানীর মিরপুর, বিশেষ করে দারুসসালাম এলাকার নির্দিষ্ট কিছু পকেট চিহ্নিত রয়েছে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের জন্য। এখানে মাদকের প্রবণতা, চাঁদাবাজি এবং স্থানীয় ‘গ্যাং কালচার’ দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। পুলিশ বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিরবতা বা মদদও মাঝে মাঝে এই সহিংসতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনেও এমন কোনো গ্যাং দ্বন্দ্ব বা চাঁদাবাজি-সংক্রান্ত বিরোধ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনা ঘটার পর পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে, তদন্ত শুরু করে – এটাই যেন এখন নিয়তির নিয়ম। কিন্তু কোনো কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে এধরনের সহিংসতা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। সমাজে ভয় আর অনিশ্চয়তা ছড়াতে থাকবে।
দুই তরুণের এই নির্মম মৃত্যু কেবল একটি ঘটনা নয়, এটি একটি অশনি সংকেত। ঢাকার মতো শহরে যদি দিনে দুপুরে এমন সহিংসতা ঘটে এবং আমরা শুধু 'তদন্ত চলছে' বলে দায় এড়িয়ে যাই, তাহলে শহর ধীরে ধীরে সহিংসতার অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। এখনই সময়, নিরাপত্তা ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন এবং সামাজিক সচেতনতায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার।

 
                         
         
         
        