জামালপুরের দাপুনিয়ায় সাতটি পরিবারকে মধ্যযুগীয় শরীয়াহর নামে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। ইউনুস সরকারের নীরব ভূমিকা কি তালেবানি বাংলাদেশ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে?
২০২৫ সালের বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আমরা যদি ভাবি, এমন কোনও এলাকা নেই যেখানে মধ্যযুগীয় বর্বরতা আবার ফিরে আসতে পারে—তবে জামালপুরের দাপুনিয়া আমাদের ভুল প্রমাণ করেছে। এই পৌর এলাকায় যা ঘটেছে, তা এক কথায় বলা যায়: রাষ্ট্রীয় শাসনের পূর্ণ ব্যর্থতা এবং উগ্র-ধর্মীয় জিহাদি মডেলের উত্থান।
শুক্রবার দুপুরের একটি সাধারণ পারিবারিক ঝগড়া কীভাবে রূপ নিল ভয়ঙ্কর এক রক্তচক্ষু দেখানো সালিশ নাটকে, তা যেন আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর এক কটাক্ষ।
স্থানীয় কিছু মাতব্বর নিজেদের খেয়ালখুশিমতো “শরীয়াহ ফতোয়া” দিয়ে সমাজচ্যুতি ঘোষণা করলেন সাতটি পরিবারকে—এমনকি হুমকি দেওয়া হলো তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে, সমাজে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে, মসজিদ-স্কুল-বাজারে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
এটি কি ইসলাম? না, এটি ‘ইসলাম’ নামের ব্যবহার করে উগ্রবাদী ও লোভী গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের কৌশলমাত্র। এটি সেই “তালেবানি শাসন”, যা একসময় আমরা দেখেছিলাম আফগানিস্তানের কাবুলে—আজ তা ফিরে এসেছে জামালপুরের দাপুনিয়ায়।
এই ভয়াবহ ঘটনার সূত্রপাত আমিনুল ইসলাম ও শামিম আহমেদ নামধারী ‘মাতব্বরদের’ কথিত সালিশ থেকে। মো. মুনছুরের কাছে জবরদস্তিমূলকভাবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়, যা না দেওয়ায় সরাসরি হুমকি এবং পরে সমাজচ্যুতির ঘোষণা। স্থানীয় মসজিদ মাইক ব্যবহার করে এভাবে রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রবিরোধী এক শাস্তি কার্যকর করা হয়।
এখানে প্রশ্ন জাগে—জামালপুর জেলা প্রশাসন কোথায়? আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছে? এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে প্রশ্ন আসে, এই দেশের সরকার, মানে ইউনুসের নেতৃত্বাধীন স্বঘোষিত কর্তৃপক্ষ—তারা কেন চুপ?
আসলে চুপ নয়—তাদের এই নীরবতা এক ধরনের প্রশ্রয়। কারণ, এই সরকার যে নিজেই অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, তাদের পক্ষে সুস্থ, মানবিক, গণতান্ত্রিক শাসন বজায় রাখা অসম্ভব।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ হোক কিংবা বাংলাদেশের সংবিধান—কোথাও কোনো গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে পরিবারসমূহকে সমাজচ্যুত করার বিধান নেই। এটি একান্তই মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ। তবু এই ঘটনা ঘটছে দিনের পর দিন—আর প্রশাসন মুক ও বধির।
মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিমের ভাষায়—”এটা সরাসরি ফ্যাসিবাদী ধর্মীয় দমননীতি, রাষ্ট্র অনুমোদিত সন্ত্রাসেরই রূপান্তর।”
এই ঘটনার ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্তমূলক গুরুত্ব রয়েছে। আজ যদি সাতটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করা যায়, কাল তা হতে পারে ৭০টি, ৭০০টি। তালেবানি মডেল একবার ঢুকে গেলে তা গুটিয়ে আনা যায় না। এবং সেই মডেল চালু হচ্ছে ইউনুসের অযোগ্য নেতৃত্ব ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ মদদে।
বাংলাদেশ কি তালেবানী আফগানিস্তানের দিকেই ধাবিত হচ্ছে? এই প্রশ্ন আজ আর তাত্ত্বিক নয়। দাপুনিয়ার ঘটনাই তার বাস্তব প্রমাণ। সমাজচ্যুতি, গ্রাম্য ফতোয়া, ধর্মের নামে শাস্তি আর রাষ্ট্রের নীরবতা—সব মিলিয়ে একটি ভয়াবহ সামাজিক অবক্ষয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদি আমরা এই বর্বরতা প্রতিরোধে এখনই সক্রিয় না হই, তবে আগামীকাল এই ঘটনা শুধু জামালপুরে নয়—চট্টগ্রাম, যশোর, সিলেট কিংবা ঢাকার বুকেও ঘটবে। এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে, মানবাধিকারের পক্ষ নিতে হবে, আর বলতে হবে: বাংলাদেশ তালেবান হবে না।
