বরিশালের গৌরনদীতে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় এক কিশোর আটক। এই ঘটনায় ধর্মীয় সহিংসতা ও উগ্রবাদী চিন্তার বিস্তারের আশঙ্কা বাড়ছে।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার জঙ্গলপট্টি গ্রামে রাম কৃষ্ণ দে’র বাড়ির পারিবারিক মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় এক কিশোরকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত কিশোর বয়সে কম হলেও তার আচরণ ছিল “সুসংগঠিত ও পূর্বপরিকল্পিত”।
ধর্মীয় সহিংসতা না মানসিক প্ররোচনা?
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেউ এটিকে উগ্র ধর্মীয় প্রভাবের ফলাফল বলছেন, আবার কেউ এটিকে কিশোর অপরাধের উদ্বেগজনক প্রবণতা হিসেবে দেখছেন।
সমাজবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে বিদ্যমান ঘৃণার ভাষা, ধর্মীয় মেরুকরণ, এবং রাজনৈতিক বিভাজন কিশোরদের মনে প্রভাব ফেলছে।
ছোটবেলা থেকেই ঘৃণার বীজ বপন করলে তারা বড় হয়ে সহিংসতায় ঝুঁকতে পারে।
একজন সমাজবিজ্ঞানী বলেন,
“যেখানে শিক্ষা, সহনশীলতা ও মানবিকতা শেখানো উচিত, সেখানে আমরা ঘৃণা ছড়াচ্ছি। ফলে শিশু-কিশোররাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে।”
রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব?
বিভিন্ন মহলের দাবি, দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবেশ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে সহায়তা করছে।
অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাষ্ট্র যদি কঠোরভাবে এর প্রতিবাদ না করে, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে।
তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাটির তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্ত কিশোরের সঙ্গে কোনো গোষ্ঠী বা চক্র জড়িত আছে কিনা—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বয়স বিবেচনায় বিচার হলেও ঘটনার প্রেক্ষাপট গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
এই ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও কিশোর মানসিকতার সংকটকে সামনে এনে দেয়।
একটি মানবিক ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের পরিবার, সমাজ, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় অবস্থান—সব কিছুরই পরিবর্তন প্রয়োজন।
প্রস্তাবনা:
- ধর্মীয় সহনশীলতা ভিত্তিক শিক্ষা প্রণয়ন জরুরি।
- ঘৃণার রাজনীতি বন্ধে জাতীয় সংলাপ শুরু করা হোক।
- কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা ও কাউন্সেলিং বাড়ানো দরকার।
