 
                  বাংলাদেশে ১৮ জন বিচারককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও, এর স্বচ্ছতা ও ব্যাখ্যার ঘাটতি প্রশ্ন তুলেছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে।
বাংলাদেশে এক আলোচিত প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের আওতায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের ১৮ জন বিচারককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ১০ জুলাই রাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের এই ১৮ সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হলো।
তারা নিয়ম অনুযায়ী তাদের অবসরকালীন সব সুবিধা পাবেন।
অবসরে পাঠানো বিচারকদের মধ্যে আছেন ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী, ভোলা, খুলনা, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, হবিগঞ্জ ও বরিশালের বিভিন্ন জেলা ও দায়রা জজ, ট্রাইব্যুনাল ও বিশেষ আদালতের বিচারক।
আইন ও বিচার বিভাগের উপ-সচিব মো. আজিজুল হক সই করা প্রজ্ঞাপনে এই বিচারকদের নাম প্রকাশ করা হয়, যা বিচার বিভাগ ও প্রশাসন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
স্বাভাবিক নিয়ম নাকি অস্বাভাবিক বার্তা?
যদিও এই অবসর প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে, বিচার বিভাগীয় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং বিচারকদের স্বাধীনতার প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে।
অনেকেই বলছেন—
- হঠাৎ একযোগে এতজন অভিজ্ঞ বিচারককে অবসরে পাঠানোর পেছনে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ছিল না।
- কোনো কার্যকর ব্যাখ্যা বা পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বিচার বিভাগে একটি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
রাজনৈতিক প্রভাবের আশঙ্কা?
বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচকরা বলছেন,
সরকারপক্ষীয় চাপের ফলেও এমন সিদ্ধান্ত হয়ে থাকতে পারে, যেখানে নিয়ন্ত্রণ, প্রভাব বিস্তার বা ভবিষ্যত মামলাসমূহে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করাই হতে পারে মূল উদ্দেশ্য।
কী বার্তা দিচ্ছে এই সিদ্ধান্ত?
বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে হঠাৎ পরিবর্তন, অভিজ্ঞতা হারানো এবং ভবিষ্যতের বিচারিক কার্যক্রমে যোগ্যতার ঘাটতির আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপের মুখে রয়েছে,
তখন বিচারক অবসরের এমন সিদ্ধান্ত সরকারের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি কমিটমেন্ট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
১৮ জন বিচারকের অবসর শুধু একটি প্রশাসনিক ঘটনা নয়, এটি একটি প্রতীকী সংকেত
— যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে একটি বৃহৎ বিতর্ককে সামনে এনেছে।
নিয়ম মেনে হলেও এই সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা, পরিপূর্ণ তথ্য প্রকাশ ও ব্যাখ্যা অনিবার্য—
তা না হলে এমন সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা হ্রাস করতে পারে।

 
                         
         
         
        