ময়মনসিংহের ভালুকায় মা ও দুই শিশুকে গলাকেটে হত্যা: পারিবারিক দ্বন্দ্ব না কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড? নিখোঁজ ভাই নজরুলের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এক ভাড়া বাসা থেকে গৃহবধূ ময়না আক্তার (৩০) ও তার দুই শিশু সন্তান রাইসা (৭) ও নীরব (২)-এর গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে স্থানীয় জনপদ। একটানা তিনটি নির্মম হত্যাকাণ্ড যেন নতুন করে প্রশ্ন তোলে—বাংলাদেশে পারিবারিক নিরাপত্তা আদৌ কতটা নিশ্চিত?
সোমবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে কাজ থেকে ফিরে বাসার দরজায় তালা লাগানো দেখতে পান নিহতদের স্বামী রফিকুল ইসলাম। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতেই স্ত্রীর ও দুই সন্তানের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পান তিনি।
ভালুকা মডেল থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ নিহতদের দেবর নজরুল ইসলাম। তিনি একই বাসায় বসবাস করতেন এবং ঘটনার সময়ও তার অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ উভয়েই তার খোঁজে তৎপর রয়েছে। নিখোঁজ নজরুল এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ‘কী পারসোনাল মোটিভ’ থাকতে পারে, তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, এটি হতে পারে একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে খুনের ধরন, ঘর তালাবদ্ধ থাকা, এবং কোনো জিনিসপত্র এলোমেলো না থাকায় এটিকে চুরির উদ্দেশ্যে খুন বলার সুযোগ নেই। ফলে ব্যক্তিগত রাগ, সম্পর্কের টানাপোড়েন কিংবা মানসিক বিকারগ্রস্ততা—সবই সম্ভাব্য বিশ্লেষণের আওতায় আসছে।
এই ঘটনার পর স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুরাও যে নিরাপদ নয়, এই নির্মম সত্য ফের একবার সামনে এসেছে।
এই ঘটনার আলোকে প্রশ্ন উঠছে—গ্রাম বা মফস্বল শহরেও কি পারিবারিক নিরাপত্তা আজ ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে? একজন স্বামী সকালে কাজে যাওয়ার পর, স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরে আর নিরাপদ নন—এই বাস্তবতা সমাজকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
ভালুকা থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, “আমরা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। দ্রুতই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।” তবে শুধু অপরাধীর বিচার নয়, সমাজে এমন ‘শক ওয়েভ’ তৈরি করা অপরাধের পেছনের মনস্তত্ত্ব ও পারিবারিক ভাঙনেরও গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন।
ময়মনসিংহের ভালুকায় ময়না আক্তার ও তার দুই নিষ্পাপ সন্তানকে হত্যা শুধুই একটি ফৌজদারি ঘটনা নয়—এটি একটি সামাজিক ট্র্যাজেডি, যা আমাদের পারিবারিক কাঠামোর, নৈতিকতাবোধের ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার গভীর দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি।
আমরা আশা করি, দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষ করে সত্য উদঘাটন হবে এবং দোষীরা শাস্তি পাবে। একইসঙ্গে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন।
