 
                  নানীতে আট বছরের এক পথশিশুকে ধর্ষণের ঘটনা শুধু একটি নিছক অপরাধ নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার নির্মম ব্যর্থতা— যেখানে নিরাপত্তা, মানবতা ও শিশু অধিকার প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার বনানী এলাকায় ১৪ জুলাই দিবাগত রাতে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল— এই নগরীতে মানবতা আজও ভাসমান, বিশেষ করে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশটি যখন পথশিশু।
একটি আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগ ধর্ষণের প্রাথমিক আলামত পেয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। মেয়েটি জানিয়েছে, মহাখালীর একটি হাসপাতালের পেছনে এক ব্যক্তি তাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুটি বলেছে, অপরাধীকে সে চিনে ফেলবে।
এ ঘটনাটি নিছক একটি অপরাধ নয়। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি— যেখানে পথশিশুরা জন্ম থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় বেড়ে ওঠে, আইনি সুরক্ষা থেকে থাকে বঞ্চিত, এবং এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যেই তাদের শৈশব হারিয়ে যায়।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা, আশ্রয়, খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে হাজার হাজার পথশিশু সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত। এদের কেউ রাস্তার পাশে ঘুমায়, কেউ ফ্লাইওভারের নিচে দিন কাটায়, কেউ আবার বস্তিতে কিংবা স্টেশনে দিন গুজরান করে। এদেরকে শোষণ করা হয়, ব্যবহার করা হয় শ্রমিক হিসেবে কিংবা আরও ভয়াবহ অপরাধে— যেমন আজকের এই ধর্ষণ।ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও বাস্তবতা হলো— পথশিশুরা সেই আইনি কাঠামোর আওতায় আসতে পারে না। এদের নেই অভিভাবক, নেই মামলা করার মতো উপায়, নেই এমন কেউ যে সোচ্চার হবে। ফলে এরা নীরবে নিপীড়নের শিকার হয়, বিচারহীনতার চক্রে হারিয়ে যায়। এই শিশুটির ক্ষেত্রেও তাই হওয়ার আশঙ্কা প্রবল— যদি না সমাজ ও প্রশাসন সক্রিয় হয়।
শুধু রাষ্ট্র নয়, আমরা নাগরিকরাও দায় এড়াতে পারি না। সমাজে যখন শিশুরা ভাসমান অবস্থায় জীবন যাপন করে, তখন আমাদের নৈতিক ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠে। কতজন আমরা পথশিশুদের নিরাপত্তা বা সুরক্ষার কথা ভেবে থাকি? তাদের জীবনের উন্নয়নের জন্য কোনো নীতিমালার দাবি করি?
বনানীর এই ঘটনাটি আরেকটি দৃষ্টান্ত হয়ে রইল— পথশিশুদের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্র কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে। আমাদের এখনই জেগে উঠতে হবে, নয়তো প্রতিদিন কোনো না কোনো শিশুর শৈশব, সম্ভাবনা ও জীবন এই অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।

 
                         
         
         
        