পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ডাকাতির সময় নববধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি শুধু আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতা নয়, বরং নারী নিরাপত্তার ওপর ভয়াবহ আঘাত।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘটে যাওয়া ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়—বরং তা বর্তমান বাংলাদেশে নারী নিরাপত্তা, গ্রামীণ জনপদের আইনশৃঙ্খলা ও বিচারহীনতার এক ভয়ংকর প্রতিচ্ছবি। গত রোববার গভীর রাতে, সাত থেকে আটজনের একটি সশস্ত্র ডাকাত দল এক নববধূর বাড়িতে ঢুকে শুধু লুটপাটই চালায়নি, বরং চারজন মিলে নববধূকে পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় শুধু ভুক্তভোগী পরিবার নয়, পুরো গ্রাম, এমনকি দেশজুড়ে মানুষের হৃদয়ে কাঁপন উঠেছে।
রাত আনুমানিক ২টা থেকে ৩টার মধ্যে ডাকাত দল একটি একতলা বাড়ির বারান্দার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে।
প্রথমেই তারা পরিবারের সব সদস্য নারী, পুরুষ, শিশু সবার হাত-পা ও মুখ বেঁধে জিম্মি করে। এরপর অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে লুটে নেয় প্রায় ১৩ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৫০ হাজার টাকা।
শুধু অর্থসম্পদেই ক্ষান্ত হয়নি তারা—এক পর্যায়ে চার ডাকাত এক নববধূকে অন্য ঘরে নিয়ে পাশবিকভাবে ধর্ষণ করে।
এই ঘটনার পর সোমবার বিকেলে পটুয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এখন পর্যন্ত শাকিল ও রাসেল নামের দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
এই ঘটনায় প্রশ্ন?
—ডাকাতি ও ধর্ষণ একসঙ্গে সংঘটিত হওয়া কি কাকতালীয়, নাকি এটি একটি পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের কাজ?
গ্রামে রাতের বেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি, পুলিশের টহল না থাকা এবং স্থানীয় গোয়েন্দা কার্যক্রমের দুর্বলতা এই ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
এই ঘটনায় সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক বিষয় হলো, এক নববধূ যার জীবন শুরু হয়েছিল নতুন করে—তার সেই জীবনে ঘটল এক দুঃস্বপ্ন, যা তার মানসিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনকে চিরতরে বদলে দিতে পারে।
এই ধর্ষণ কেবল একটি নারীকে অপমান করা নয়, বরং আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার নগ্ন প্রদর্শন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকায় বর্তমানে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অনেকেই রাত্রিকালীন পাহারা ও স্বেচ্ছাসেবী গ্রাম নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—কেন রাষ্ট্র নিজেই তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে?
এই ঘটনার যথাযথ বিচার, দ্রুত তদন্ত এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এমন ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে থাকবে। শুধু মামলা রুজু করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না—প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের এই ঘটনায় জবাবদিহির আওতায় আনাও জরুরি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়,
গ্রামীণ এলাকায় নারীর নিরাপত্তা আজ কতটা ঝুঁকির মুখে।
এটি কোনো ‘ডাকাতি’র ঘটনা নয়—এটি এক নারীর সম্মান, একটি পরিবারের আত্মার ওপর আঘাত এবং একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার রক্তাক্ত চিত্র।
এই ঘটনার বিচার হোক দ্রুত, ন্যায়সঙ্গত এবং দৃষ্টান্তমূলক—নইলে প্রতিটি নারী আজ আতঙ্কে দিন কাটাবে, আর প্রতিটি অপরাধী নতুন সাহস পাবে।
