 
                  বাংলাদেশে মোল্লা-মিলিটারি জোটের উদ্ভব কি শুধুই দেশীয় রাজনীতির ফল, না কি এর পেছনে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের গোপন জোট রয়েছে? এই বিশ্লেষণে খোঁজা হয়েছে জর্জ সরোস, সিআইএ, মোসাদ ও এমআই৬-এর সম্ভাব্য ভূমিকাসহ শিশু হত্যাকাণ্ডের অমানবিক বাস্তবতা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা বারবার দেখেছি—ধর্ম, সেনাবাহিনী ও বৈশ্বিক কূটনীতির অদৃশ্য শক্তিগুলো যখন একসঙ্গে ছায়া গাঢ় করে, তখন কেবল সরকার নয়, একটি প্রজন্ম হারিয়ে যায়। ২০২৪ সালের শেষ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত যেসব শিশুরা মারা গেল, তাদের রক্তের উপর দিয়ে এখন ক্ষমতার রাজপথ পিচঢালা হচ্ছে।সাধারণ মানুষ আজ স্তব্ধ, ভীত ও প্রতারিত।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই প্রতারণা কেবল ঘরোয়া রাজনীতির ফল, না কি এর পেছনে রয়েছে এক গভীর আন্তর্জাতিক চক্রান্ত?
বর্তমান সরকারকে দেশের বহু মানুষ অবৈধ মনে করলেও, ভয়, সন্ত্রাস ও তথ্য-নিয়ন্ত্রণের ফলে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
গোটা রাষ্ট্র যেন একটি শ্বাসরুদ্ধকর কনফাইনমেন্টে আবদ্ধ।
এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্লজ্জ দখলদারি আচরণ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি মানুষের স্বাধীনচিন্তা ও প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
এই রাষ্ট্রযন্ত্র—যেটা এখন শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর নয়, বরং তথ্যযন্ত্র, ধর্মযন্ত্র এবং বিদেশি অর্থায়িত এনজিও যন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত—তা প্রতিদিন নতুনভাবে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে পদদলিত করছে।
যখন দেশীয় রাজনীতি বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন চোখ ফেরাতে হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দিকে।
বারবার উঠে আসে এমন কিছু নাম—জর্জ সরোস, সিআইএ, মোসাদ, এমআই৬—যারা বিশ্বের বহু দেশে ‘গোপন বিপ্লব’ ও শাসনপদ্ধতির পুনঃগঠনে ভূমিকা রেখেছে।
প্রশ্ন ওঠে:
এই সরকার কি শুধুই নিজেদের ক্ষমতা রক্ষার জন্য নয়, বরং বিশ্বরাজনীতির গোপন পরীক্ষাগারের অংশ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে?
জর্জ সরোস যিনি গণতন্ত্র ও উন্মুক্ত সমাজের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত, তিনি কি বাংলাদেশের ইসলামি-সামরিক ঐক্যের এই উত্থান নিয়ে নির্বিকার?
একটি মোল্লা-মিলিটারি জোট—যা প্রথাগত রাজনৈতিক কাঠামোকে বাইপাস করে সামরিক ছায়ায় ধর্মীয় দমন-পীড়নের পথে হাঁটে—তা কেবল দেশীয় পরিস্থিতির ফল হতে পারে না। বরং এটাকে এক প্রকার “নতুন ধরনের হাইব্রিড অভ্যুত্থান” হিসেবে দেখা যেতে পারে।
গত এক বছরে রেকর্ড সংখ্যক শিশু পুলিশি গুলিতে, দমন-পীড়নে বা রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে।
অনেকে প্রশ্ন করেন: “তাদের বিরুদ্ধে কী ছিল? তারা তো কেবল স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল।”
এটা কি নিছক দুর্ঘটনা? না কি এটি এক নতুন ধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস যেখানে আগামী প্রজন্মকে নির্মূল করে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা হয়?
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নীতি যেখানে গাজার শিশুরাও “যুদ্ধের শত্রু”—তা কি এখন ঢাকার মগবাজার, উত্তরা, গোপালগঞ্জ বা খুলনায়ও বাস্তব হয়ে উঠছে?
গত কয়েকদিনের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ—বিশেষ করে সেনা-গোপন সংস্থার ভেতর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব—প্রমাণ করে, সবকিছু এতটা সোজাসাপ্টা নয়। কেউ কেউ বলছেন, আন্তর্জাতিক শক্তির অঙ্গুলি হেলনে, কিছু গোষ্ঠী নিজেদের ব্যবহারের পুতুল হিসেবে তুলে ধরছে।
এ যেন এক আন্তর্জাতিক মঞ্চ যেখানে কুশীলবরা নিজেরা জানে না কে তাদের নাট্যনির্দেশক। বাংলাদেশের মানুষ আর খেলনার জাতি হতে চায় না।
আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের বলতেই হবে—বাংলাদেশে যদি তাদের কোনও ভূমিকাই থেকে থাকে, তবে শিশুদের জীবন দিয়ে তার মাশুল যেন না হয়।
এই দেশ পুতুল নয়, এই দেশের ভবিষ্যৎ কেনাবেচা করার মতো কোনো পণ্য নয়। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শিশুর নিরাপত্তা—এই তিন বিষয়ে আজ আন্তর্জাতিক মহলের স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ এখন শুধু রাজনৈতিক সংকটে নয়, এক গভীর আধ্যাত্মিক ও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
যদি আমরা এই সংকটের মূল উপাদানগুলোকে চিনতে ব্যর্থ হই—দেশীয় বিশ্বাসভঙ্গ, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও সামরিক-ধর্মীয় দখলদারি—তাহলে এই রাষ্ট্র শুধুই সরকার নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও হারাবে।
এখনই সময় প্রশ্ন তোলার, প্রতিরোধ গড়ার এবং শিশুদের জীবন বাঁচানোর।

 
                         
         
         
        