 
                  চলতি জুলাইয়ের প্রথম ১৯ দিনে ১৫২ কোটি ২৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এলেও দেশের ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে আসেনি এক টাকাও। প্রশ্ন উঠছে—রেমিট্যান্স শূন্যতার পেছনে কি ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর প্রবাসীদের আস্থা হারানোর ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে?
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তির একটি হচ্ছে রেমিট্যান্স। এই বিদেশি আয় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি ব্যয় ও টাকার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে। অথচ চলতি জুলাইয়ের প্রথম ১৯ দিনে ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে এক ডলারও রেমিট্যান্স আসেনি—এটা নিছক সংখ্যার হিসাব নয়, বরং গভীর কাঠামোগত দুর্বলতার ইঙ্গিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেমিট্যান্সহীন ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে:
- রাষ্ট্রায়ত্ত: বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি
- বিশেষায়িত: রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক
- বেসরকারি খাত: কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক
- বিদেশি খাত: হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, উরি ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া
এই তালিকা স্পষ্ট করে দেয় যে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত নয়, বরং নতুন বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোরও প্রবাসীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পেয়েছে।
চলতি বছর মার্চ, মে ও এপ্রিল মাসে যথাক্রমে ৩৩০ কোটি, ২৯৭ কোটি ও ২৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। অথচ এই সাফল্যের ছায়াতলে ১০টি ব্যাংকের একরকম নিষ্ক্রিয়তা গভীর উদ্বেগের জন্ম দেয়।
প্রবাসীরা যখন বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন, তখন কিছু ব্যাংকের প্রতি এই অনীহা কি ব্যাংকগুলোর প্রবাসী সেবায় ব্যর্থতার পরিচায়ক নয়?
এই শূন্যতা শুধু জনপ্রিয়তা নয়, বরং এক ধরণের অব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত। এর পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
- ডিজিটাল রেমিট্যান্স প্ল্যাটফর্মে প্রবেশে ব্যর্থতা
- প্রবাসীদের আস্থার সংকট
- ব্যাংকের দূতাবাস বা প্রবাসী অঞ্চলে শাখার অপ্রতুলতা
- স্বচ্ছতা ও সেবা মানের ঘাটতি
বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রবাসীবান্ধব সেবা থেকে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি বারবার আলোচিত হয়ে আসছে।
১০টি ব্যাংকের রেমিট্যান্স শূন্যতা আমাদের বলছে— সুধারণা, সেবা ও স্বচ্ছতা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রবাসীদের বিশ্বাস অর্জনের পূর্বশর্ত। রাষ্ট্রায়ত্ত বা প্রাইভেট হোক, ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর এবং গ্রাহককেন্দ্রিক হতে না পারলে তারা ধীরে ধীরে প্রবাসীদের পাঠানো বৈধ অর্থপ্রবাহ থেকে ছিটকে পড়বে।
প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির রক্তনালী।
রেমিট্যান্স প্রবাহ শুধু অর্থনৈতিক সূচক নয়, এটি একটি আস্থার প্রতিফলন।
তাই যারা সেই আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ, তারা কেবল সংখ্যা হারাচ্ছে না—হারাচ্ছে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও।

 
                         
         
         
        