 
                  ২১ জুলাই বিমান দুর্ঘটনার পর সেনাবাহিনীর আচরণ কি শুধুই দায়িত্ব পালন, নাকি চক্রান্তের ইঙ্গিত? পরিস্থিতিগত প্রমাণ, আচরণ ও প্রশ্নের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ।
দুনিয়াতে প্রতিটি খুনের পেছনে চক্রান্ত থাকে না, আবার কিছু চক্রান্তের কখনও প্রমাণ মেলে না—তবু মানুষ ভুলে না। কারণ, সমাজের গভীর স্মৃতিতে হত্যা ও অমানবিকতা চিরকাল গেঁথে থাকে। ১৯৬৩ সালে জন এফ কেনেডি হত্যার পর যেমন এখনও নানা তত্ত্ব ঘোরে, তেমনি ঘোরে ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ কিংবা সাম্প্রতিক ২০২৪-২৫ সালের ঘটনাবলীর রহস্যময় আবরণ।
তবে ২১ জুলাইয়ের বিমান দুর্ঘটনা—যেখানে একাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে—তা নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া এবং আচরণ সমাজের বৃহৎ অংশকে হতবাক করেছে।
কারণ সেনাবাহিনী শুধু দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি, বরং তথ্য নিয়ন্ত্রণ, মিডিয়ার প্রশ্নে প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং দায়সারা বক্তব্যে তারা যেন হয়ে উঠেছে জবাবদিহির বাইরে এক অদৃশ্য সত্তা।
এ ঘটনায় কেউ সরাসরি ‘ষড়যন্ত্র’ বলুক বা না বলুক, জনগণের প্রশ্ন থেমে নেই—এবং এখানেই শুরু হয় পরিস্থিতিগত প্রমাণাদির গুরুত্ব।
অভিযোগ নেই যে বিমানের দুর্ঘটনা ইচ্ছাকৃত ছিল। কিন্তু অভিযোগ আছে অস্বাভাবিক আচরণের।
- কেন এত দ্রুত হেলিকপ্টার এল?
- কারা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল?
- কেন মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী প্রশ্নের মুখে প্রতিরক্ষামূলক ও আক্রমণাত্মক আচরণ দেখাল?
- কেন এত বড় ঘটনা নিয়েও সামরিক-নাগরিক সমন্বয়ের কোনো স্বচ্ছতা নেই?
সেনাবাহিনী কখনো দুঃখপ্রকাশ করে, কখনো করে না—এর প্যাটার্ন বলে দেয় তাদের জন্য কোন মৃত্যু গ্রহণযোগ্য, কোনটা নয়।
রানা প্লাজার সময় তারা কাঁদে, কিন্তু এখানে শুধুই শীতলতা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কিংবা বিডিআর বিদ্রোহের সময়ের মতো আচরণ আবারো ফিরে এসেছে—আগে থেকেই প্রস্তুত নিরাপত্তা বাহিনী, সংবাদ নিয়ন্ত্রণ, বক্তব্যে রেষ ও দম্ভ।
ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে যে চক্রান্তের বাস্তবতা প্রমাণ ছাড়াও আবেগ, প্রতিক্রিয়া এবং অসংলগ্নতা দিয়ে বিশ্লেষণ করা যায়।
আর যারা এতে জড়িত না, তারা সাধারণত প্রতিক্রিয়ায় মানবিক থাকে—না যে সেটা আবেগ দিয়ে প্রমাণ করা যায়, কিন্তু আচরণ দিয়ে তা ধরা পড়ে।
যেমন ২০০৯ সালের বিদ্রোহ নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা কীভাবে একপাক্ষিকভাবে ভিক্টিমদের দায়ী করেছিলেন, সেটিও ছিল এক ধরনের আচরণগত ইঙ্গিত।
- এই দুর্ঘটনায় দায় কার?
- কেন বেসামরিক প্রতিক্রিয়া এত দুর্বল?
- কারা লাভবান?
- আর কারা চেপে ধরেছে প্রশ্ন করার স্বাধীনতাকে?
বিচার বা তদন্ত নয়, প্রাথমিকভাবে প্রশ্ন করতে না দেওয়া চক্রান্তের প্রথম স্তর—এটা যতদিন সত্য, ততদিন জনমনে সন্দেহ থেমে থাকবে না।
চক্রান্তের লিখিত দলিল না থাকলেও ইতিহাসে চক্রান্ত টিকে থাকে প্যাটার্ন, অস্বাভাবিকতা এবং প্রশ্নবিদ্ধ আচরণের কারণে।
বিচার না হোক, মানুষ তার স্বভাবজাত বিচারবোধে তা বুঝে নেয়।
হত্যা আর দুর্ঘটনার মাঝে পার্থক্য করতে শেখা সমাজই একদিন সভ্য হয়।
বিচারই মানুষকে মানুষ করেছে, অমানুষ নয়।
২১১ শিশুর কান্না, প্রশ্ন ও রক্ত—এসব কখনও ধামাচাপা পড়ে না।
যাদের হৃদয় তাতে সাড়া দেয় না, তারা শুধু ক্ষমতার শীর্ষে নয়, বিবেকহীনতার চূড়ায় বসে আছে।

 
                         
         
         
        