 
                  কুমিল্লার লাকসামে হায়াতুন্নবী নামের এক যুবককে চোখ উপড়ে হত্যার ঘটনায় গ্রামে চরম আতঙ্ক। এটি পরিকল্পিত খুন না নৃশংস বার্তা—নিশানা কার? পড়ুন বিশ্লেষণ।
একজন তরুণ মানুষ, ৩০ বছর বয়সী হায়াতুন্নবী—যার জীবনে ছিল স্বাভাবিক ছন্দ, কোন শত্রুতা ছিল না বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। অথচ শুক্রবার সকালে তার নিথর দেহ পাওয়া গেল গ্রামের পাশের একটি বাগানে, চোখ উপড়ানো অবস্থায়। নিঃসন্দেহে এটি একটি পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড, যা কুমিল্লার লাকসামের শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে গভীর আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।
আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মুসলিম মিয়ার ছেলে হায়াতুন্নবী বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে জানায় স্থানীয় সূত্র।
শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় গ্রামের একটি বাগানে।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
এখানে প্রশ্ন উঠছে—এই হত্যার ধরন শুধুই কি নির্মমতা, নাকি এর পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত বার্তা বা প্রতিশোধের মনস্তত্ত্ব?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে দৃষ্টিগোচর হয়েছে—চোখ বা মুখ বিকৃত করে হত্যা মূলত প্রতিশোধ, ভয় দেখানো বা “মেসেজ পাঠানো”র পন্থা হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয় সচিব মো. রফিকুল ইসলামের ভাষায়,
“চোখে আঘাত ছিল স্পষ্ট”, যা ইঙ্গিত দেয়—এটি তাৎক্ষণিক খুন নয়, বরং পূর্বপরিকল্পিত নৃশংসতা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, নিহত হায়াতুন্নবী ছিলেন একজন “ভালো ছেলে”, নিরীহ ও সামাজিক।
প্রতিবেশী রমিজ উদ্দিনের ভাষায়, “তার সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না”।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—যে তরুণের কোনো শত্রুতা নেই, তাকে এত ভয়ংকরভাবে কে বা কারা হত্যা করল?
গ্রামে এখন একটাই আলোচনা—এর পেছনে কি ব্যক্তিগত রাগ, জমিজমা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব, নাকি অন্যকোনো অপরাধচক্র?
লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা সমকাল-কে জানান,
“প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”
তবে এই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।
বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায়—চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা কিছুদিন পর ধামাচাপা পড়ে যায়।
তদন্ত অপরিণত থাকে, প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
হায়াতুন্নবীর হত্যাকাণ্ডও কি তেমন পরিণতি পাবে?
আইন ও সমাজবিজ্ঞান বিশ্লেষকদের মতে, যখন হত্যাকাণ্ড হয় ‘উদ্দেশ্যপূর্ণ বার্তা’ দেওয়ার উদ্দেশ্যে, তখন বিচারহীনতা কেবল অপরাধীদের উৎসাহিত করে না, বরং সমাজে একটি ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ তৈরি করে।
চোখ উপড়ে হত্যা মানে হলো—
‘তুমি কিছুই দেখবে না’, কিংবা ‘আমরা যা চাই, তাই হবে’—এই বার্তাই কি ছড়াতে চেয়েছে হত্যাকারীরা?
লাকসামের হায়াতুন্নবীর চোখ উপড়ে হত্যাকাণ্ড যেন আরেকটি সংখ্যা হয়ে না যায় পুলিশের রেকর্ডে।
প্রয়োজন নিরপেক্ষ, দক্ষ, ও প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত—যাতে এই নির্মমতার পেছনে থাকা ব্যক্তিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
নাহলে, লাকসামের বাগানে পড়ে থাকা সেই দেহের ভয়ার্ত চোখহীন চাহনি—পুরো বাংলাদেশের সামাজিক চেতনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে।

 
                         
         
         
        