 
                  রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের ৫৬ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা ঘিরে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। আসামিরা বলছেন, এটি বিএনপির নেতা-কর্মীদের দমন করার নতুন কৌশল। বিশ্লেষণ করলেন আমাদের প্রতিনিধি।
রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলা ঘিরে। ২৩ জুলাই দিবাগত রাতে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় ডেভেলপার ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের দায়ের করা মামলায় ৩৬ জনের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ২০ জনকে রাখা হয়েছে অজ্ঞাত আসামির তালিকায়।
প্রধান আসামি করা হয়েছে রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মোজাদ্দেদ জামানী সুমনকে।
দ্বিতীয় আসামি ছাত্রদলের সিটি কলেজ শাখার সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমন।
অভিযোগ অনুযায়ী, তারা ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন।
তবে অভিযুক্ত দুই নেতা সুমন ও লিমনের বক্তব্যে উঠে আসে এক ভিন্ন চিত্র।
তারা দাবি করছেন, এ মামলার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও পরিকল্পিত প্রতিহিংসা।
ছাত্রদল নেতা লিমনের ভাষ্যমতে,
‘মোস্তাফিজের কাছে আমিনুল ইসলাম নামের একজন ব্যক্তির ২৭ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে, সুমন ভাই তার আত্মীয়। থানায় বসে মীমাংসা হয়েছিল, কিন্তু পরে ষড়যন্ত্র করে মামলা দেওয়া হয়েছে।’
যুবদল নেতা সুমনও প্রথমে মোস্তাফিজকে চিনেন না বললেও পরে ‘ফ্ল্যাট বিষয়ক আলাপ’ থাকার কথা স্বীকার করেন।
মামলার বাদী মোস্তাফিজুর রহমান পরিচিত একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী।
রাজশাহীর রাজনৈতিক মহলে তাঁকে সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার রেণীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে চেনা যায়।
এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ফেসবুক প্রোফাইলে এদের সঙ্গে ছবি প্রকাশও লক্ষ্য করা গেছে।
বোয়ালিয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাদত হোসেন জানান,
‘শুধু এজাহার হাতে পেয়েছি। পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে যাচ্ছি। ফিরে এসে তদন্ত শুরু করব।’
এমন অবস্থায় মামলার ভবিষ্যৎ গতিপথ ও বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন।
ছাত্রদল ও যুবদলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের দমন করতেই এই মামলা সাজানো হয়েছে।
তারা আগামী শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন বলে জানান।
তাদের দাবি, “মোস্তাফিজ হচ্ছে স্বৈরাচারী সরকারের দোসর।”
এই মামলা নিয়ে দুই পক্ষের বক্তব্য বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে।
একদিকে মোস্তাফিজ দাবি করছেন চাঁদার চাপ, অন্যদিকে যুবদল-ছাত্রদলের বক্তব্য—এটি রাজনৈতিক নিপীড়ন।
মামলার সত্যতা নির্ধারণ এখন তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, একটি বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক সংগঠনের ৫৬ নেতার বিরুদ্ধে একসঙ্গে এমন মামলা কতটা ‘স্বাভাবিক’?
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে দমনের হাতিয়ার হিসেবে মামলা ও আইনগত হয়রানির উদাহরণ নতুন নয়। রাজশাহীর এই ঘটনা কি সেই ধারাবাহিকতারই অংশ?
চাঁদাবাজি মামলার আড়ালে কি সত্যিই রাজনীতির গোপন হাতছানি লুকিয়ে রয়েছে?
নাকি এটি স্রেফ একটি ব্যবসায়ী-বিরোধের ফৌজদারি রূপ?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে এখন প্রয়োজন নিরপেক্ষ তদন্ত এবং স্বচ্ছ বিচারপ্রক্রিয়া।
রাজশাহীর জনগণও অপেক্ষা করছে—সত্য বেরিয়ে আসুক।

 
                         
         
         
         
         
        