 
                  টঙ্গীতে অফিস ফেরত এক মহিলা খোলা ম্যানহোলে পড়ে মারা যান। ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশনের অবহেলায় এখনো লাশ উদ্ধার হয়নি। জমজ দুই সন্তান অপেক্ষা করছে মায়ের লাশের জন্য। এই মৃত্যু কি কেবল দুর্ঘটনা, নাকি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার দলিল?
টঙ্গীর মায়ের মৃত্যু কোনও সাধারণ দুর্ঘটনা নয়—এটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও চরম নিষ্ঠুর এক চিত্র। ম্যানহোলের খোলা মুখ, বছরের পর বছর ধরে অ放 যত্নে পড়ে থাকা ঢাকনা, এবং সেই অসতর্ক ব্যবস্থাপনার বলি আজ এক নারী। তার দুটি ৮ বছরের জমজ শিশু এখনো অপেক্ষা করছে—তাদের মা ফিরে আসবে না, এটা বুঝেও তারা অপেক্ষা করছে লাশটা অন্তত ফিরে আসুক।
একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানীর রাস্তাগুলো যখন নদীতে রূপ নেয়, তখন জনগণ ঠিক কী বিপদের সম্মুখীন হয়, তা কেউ ভাবেন না।
টঙ্গীর ঘটনাটি ব্যতিক্রম নয় বরং বাংলাদেশের শহর ব্যবস্থাপনার এক ঘৃণ্য উদাহরণ।
মহিলাটি প্রতিদিনের মতো অফিস শেষে বাড়ি ফিরছিলেন, হাঁটু সমান পানি পার হয়ে।
কিন্তু রাস্তার নিচে ছিল এক অদৃশ্য মৃত্যুফাঁদ—যেখানে পড়ে মুহূর্তেই নিখোঁজ হয়ে গেলেন তিনি।
যখন জীবনের লড়াই হয় সেকেন্ডের, তখন ফায়ার সার্ভিস আর সিটি কর্পোরেশন পরস্পরের ঘাড়ে দায় চাপাতে ব্যস্ত ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,
কিছুক্ষণ খোঁজার পর তারা থেমে যায়।
কেউ আবার বসে বসে তামাশা দেখতে থাকে—একটা মায়ের মৃত্যু যেন তাদের কাছে নিছক আরেকটা ক্লান্তিকর দিন।
বিকেল ৫টার পর ‘ডিউটি শেষ’-এর যুক্তি দেখিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ফায়ার সার্ভিস।
প্রশ্ন জাগে—কোন ডিউটি মানুষের জীবনের ঊর্ধ্বে?
এই যদি হয় আমাদের রাষ্ট্রীয় জরুরি সেবার প্রতিক্রিয়া, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
ঘটনার সবচেয়ে মর্মান্তিক দিক হলো—এই মায়ের দুইটি জমজ ৮ বছর বয়সী সন্তান।
তারা এখনো জেগে আছে, কাঁদছে, মায়ের লাশ চায়।
তারা জানে না, তাদের কান্না রাষ্ট্রের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে।
ওরা মায়ের জীবিত ফেরা চায় না, শুধু একটা লাশ চায় যাতে শেষবার জড়িয়ে ধরে বিদায় জানাতে পারে।
যে রাষ্ট্র উপদেষ্টাদের আত্মীয় ড্রেনে পড়ে গেলে রাত জেগে উদ্ধার কাজ চালায়, সে রাষ্ট্র আজ ব্যস্ত এক অসহায় মায়ের পরিবারকে অবহেলা করতে।
এটি কেবল একজন নারীর মৃত্যু নয়।
এটি প্রমাণ করে যে আমাদের বর্তমান নগর ব্যবস্থাপনা কতোটা প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।
একটু বৃষ্টি হলেই— 
- ম্যানহোল ঢাকনা খোলা থাকে
- বিদ্যুৎ লাইনের তার পানিতে পড়ে
- মানুষ মারা যায়, অথচ কেউ দায় নেয় না
এই দায় সিটি কর্পোরেশনের, ফায়ার সার্ভিসের, নগর পরিচালনার, এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের।
এই লেখা শুধু সমবেদনার জন্য নয়—এটি একটি প্রতিবাদের ডাক। সেই জমজ শিশুদের চোখের পানি যেন বৃষ্টির পানিতে মিশে হারিয়ে না যায়।
আমরা চাই—
- অবিলম্বে উদ্ধার তৎপরতার ব্যবস্থাকরন
- দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি
- শহরের ম্যানহোল ব্যবস্থার সংস্কার
- দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি

 
                         
         
         
        