মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডার, স্কুল শিক্ষিকার উপর অমানবিক নির্যাতন ও মাছচাষির সম্পত্তি দখলের ঘটনায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার বিরুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের নীরবতায় আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছে তিনটি পরিবার।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার ইউনিয়নের কড়াইবাড়ীতে গত ৩ জুলাই সংঘটিত হয় নির্মম এক হত্যাকাণ্ড। রিক্তা আক্তারের পরিবারের তিন সদস্য—মা, ভাই ও বোন—নৃশংসভাবে খুন হন। ছোট বোন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, ১১ মাসের শিশু রাইসাও হামলার শিকার। অথচ আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারকেই।
ক্ষমতার ছায়ায় খুনিরা?
হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শিমুল বিল্লাহ। অভিযোগ উঠেছে, তারা আশ্রয় পাচ্ছে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ বাবা, স্কুল শিক্ষক বিল্লাল হোসেনের ছত্রছায়ায়। পুলিশের নীরবতা এবং গ্রেপ্তারে অনীহা প্রশাসনিক ইঙ্গিত দেয়।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক নির্যাতনের ভয়াবহ অধ্যায়
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শিখা রানীর ওপর চালানো হয় নির্যাতন তাকে বিবস্ত্র মারধর করে হেনস্থা করা হয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন বিল্লাল হোসেন, যিনি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পিতা।
অর্থ আত্মসাত ও প্রতিশোধের অভিযোগ
শিখা রানী স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেছেন, প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত করে বহিষ্কৃত হন।
এখন উপদেষ্টা পুত্রের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তারা প্রতিশোধ নিচ্ছেন। মোহাম্মদ আলী দাবি করেন, চট্টগ্রাম থেকে তুলে এনে তাকে পুলিশি রিমান্ডে নির্যাতন করে ৩০ লাখ টাকা আদায় করা হয়।
মাছচাষির সম্পত্তি দখলের অভিযোগ
স্থানীয় চাষি দুলাল চন্দ্রের অভিযোগ, তার পুকুর দখল এবং গাছ কেটে নেওয়ার পেছনেও বিল্লাল হোসেনের লোকজন জড়িত।যাদের মধ্যে শিমুল চেয়ারম্যান, সাত্তার মেম্বার ও মাসুদের নাম উঠে এসেছে।
বাবার পক্ষ থেকে জবাব, ছেলের নীরবতা
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে বিল্লাল বলেন, ‘শিমুল চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার ছবি ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে এটি ষড়যন্ত্র বিএনপি কায়কোবাদ ভাবছে
আমার ছেলে নির্বাচন করবে, তাই বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।’ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিশ্লেষণ: প্রশাসনিক নীরবতা নাকি রাজনৈতিক পক্ষপাত?
এই ঘটনাগুলো প্রশ্ন তোলে—ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছার পর কেউ কি তার পুরনো শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন?
যখন হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, নির্যাতনের বিচার হয় না, তখন আইনের শাসনের ভবিষ্যৎ নিয়েই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
এই ঘটনাগুলো প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। নির্যাতিতরা থানায় মামলা করতে পারেন না,
আদালতে মামলা খারিজ হয়ে যায়, আবার অভিযুক্তরা পুলিশ প্রহরায় চলে বেড়ায়—এটাই কি বর্তমান শাসনযন্ত্রের চেহারা?
