পিরোজপুরের নেছারাবাদে বিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে জাতির পিতাকে মুছে ফেলা।
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে—এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত ইতিহাসবিনাশী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনা।
একজন ঠিকাদার বিদ্যালয়ে এসে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে রেগে গেছেন।
এই হাস্যকর ও অযৌক্তিক অজুহাতকে সামনে রেখে এই অপকর্ম ঘটানো হয়েছে।
সেটি আসলে ক্ষমতাসীন একটি চক্রের অসভ্য, ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রকাশ।
সেই ছবিটি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের দেয়ালে টাঙানো ছিল।
কখনো কেউ প্রশ্ন তোলে নাই।
তাহলে হঠাৎ এই ছবি কেন অপসারণ?
কারণ, আজ রাষ্ট্রযন্ত্রের ছদ্মবেশে এমন একটি গোষ্ঠী দৃশ্যমান, যারা বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে অস্বীকার করতে চায়।
এই গোষ্ঠী বোঝে, যদি বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায়, তাহলে নতুন প্রজন্মের চিন্তা থেকে মুক্তিযুদ্ধ, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও গণতন্ত্রের ধারণাগুলোকেও ধ্বংস করা সম্ভব হবে।
তাই তারা স্কুল-কলেজ, সরকারি ভবন, অফিস আদালত থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরানোর মতো নোংরা খেলায় লিপ্ত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিজেই বলেছেন, তিনি কোনো সরকারি নির্দেশ পাননি।
তাহলে কে এই নির্দেশ দিলো?
স্থানীয় বিএনপি-ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার?
নাকি সাম্প্রতিক কালের “অন্তর্বর্তীকালীন আমলা-সরকার” যারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে?
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্য এই সন্দেহকে আরও জোরালো করে তোলে—তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যালয়গুলোতে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরানো হচ্ছে।
এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা কাকতালীয় ঘটনা নয়।
এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশের আত্মপরিচয় মুছে ফেলার দুরভিসন্ধি।
এই ষড়যন্ত্রকারীরা ভুলে যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি বাংলাদেশের আত্মা।
তিনি এই দেশের ভাষা, স্বাধীনতা, এবং সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত।
বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে কল্পনা করা অর্থহীন।
যারা আজ এই ছবিগুলো নামাচ্ছে, তারা একটি কদর্য ইতিহাস রচনা করছে—যেখানে মুক্তিযুদ্ধ নেই, জাতীয়তাবাদ নেই, আর নেই গণতন্ত্রের দাবি।
এই ইতিহাসে থাকবে এক নীরব উপনিবেশ, থাকবে আগ্রাসী বিদেশি এজেন্ডার প্রতিফলন, থাকবে আত্মসমর্পণের রাজনীতি।
তবে এও মনে রাখতে হবে—ইতিহাসের বিচার ভয়ানক কঠোর।
ইতিহাস কখনোই ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমা করে না।
যারা বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিঃসার করে দিতে চায়, তাদের পরিণতি একদিন এই জাতিই নির্ধারণ করবে।
বঙ্গবন্ধুর ছবিকে টার্গেট করে যারা রাজনৈতিক পুনরুত্থানের স্বপ্ন দেখছে, তারা ইতিহাসের অন্ধকার গহ্বরে নিজেদের ঠেলে দিচ্ছে।
জাতি হিসেবে আমাদের এখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
কারণ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একই সত্তা।
একটিকে মুছে ফেলতে গেলে, অপরটিকে ধ্বংস করতে হয়।
এ দেশ তার জন্মদাতার অপমান সহ্য করবে না।
