 
                  বঙ্গোপসাগরের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদকে ঘিরে স্বাধীনতার পর থেকেই চলেছে মার্কিন ও আন্তর্জাতিক মহলের নানামুখী ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা— কে কিভাবে প্রতিরোধ করেছেন এবং কেন ড. ইউনুসকে এই সম্পদের প্রধান ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে, তার বিশদ বিশ্লেষণ।
বঙ্গোপসাগরের তলদেশে যে বিপুল প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, বিরল খনিজ ও ব্লু-ইকোনমি সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে— তা আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নজরে পাকিস্তান আমল থেকেই। স্বাধীনতার আগে যুক্তরাষ্ট্র বুঝেছিল, পাকিস্তানের মতো “বৈমাত্রেয় ভাই” থাকলে এই সম্পদ দখল করা সহজ, কিন্তু একটি স্বাধীন বাংলাদেশ থাকলে সেই কাজ হবে কঠিন।
স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার যে কোনো কূটকৌশল কার্যত অকার্যকর হয়ে যায়।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তখন সরাসরি পিটার জে কাস্টার্সকে ঢাকায় পাঠিয়ে বামপন্থী ও বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে রাজনৈতিক বিকল্প তৈরির চেষ্টা করে।
বঙ্গবন্ধু ষড়যন্ত্র বুঝে ফেলেন এবং বাকশাল গঠন করেন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করার জন্য।
পিটার কাস্টার্সকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ওপর হামলার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়তে হয়।
গ্রেপ্তারের পরেও পশ্চিমা চাপের মুখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এরপর শুরু হয় নতুন অধ্যায়— জিয়া ও এরশাদের ক্ষমতায় আসা।
জিয়া ও এরশাদ, দেশপ্রেমের ভিন্নমাত্রা থাকলেও, বঙ্গোপসাগরের তলদেশের সম্পদ পুরোপুরি তুলে দেননি।
মার্কিন স্বার্থ অপূর্ণ থেকে যায়।
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার পর আওয়ামিলীগ ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন— শর্ত ছিল মার্কিন স্বার্থ রক্ষা।
কিন্তু ক্ষমতায় এসে বাবার পথ অনুসরণ করে সরাসরি চুক্তি বাতিল করেন।
চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন চৌধুরীর মাধ্যমে নিজ সরকারের বিরুদ্ধেই বন্দর ঘেরাও কর্মসূচি চালিয়ে দেন, ফলে মার্কিন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
২০০৫ সালে খালেদা জিয়া চীনের সাথে বঙ্গোপসাগরভিত্তিক চুক্তির পথে অগ্রসর হলে একই দিনে দেশে ঘটে যায় সারাদেশব্যাপী ৫০০ বোমা হামলা— যা অনেকেই মার্কিন স্বার্থ রক্ষার নাশকতা হিসেবে দেখে।
শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় এসে রাশিয়া ও ভারতের কৌশলগত সহায়তায় মার্কিন প্রস্তাব একের পর এক প্রত্যাখ্যান করেন।
এই বিরোধিতাই আজ মার্কিন ও পাকিস্তানপন্থী মহলের ভারতবিরোধী প্রচারণার অন্যতম কারণ।
বঙ্গোপসাগরের তলদেশের সম্পদ নিয়ে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি এখন ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে কেন্দ্র করে।
নোবেল থেকে শুরু করে দল গঠনের সব প্রচেষ্টার অন্তর্নিহিত লক্ষ্য— তাকে দিয়েই এই সম্পদ দখল।
জিয়া-এরশাদের হয়তো ৫% দেশপ্রেম ছিল কিন্তু ইউনুসের মাঝে বিন্দুমাত্র প্রমাণ নেই।
মূল লক্ষ্য বঙ্গোপসাগরের সম্পদ হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি গৌণ পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের কিছু অংশ মিলিয়ে একটি নতুন জাতিগত রাষ্ট্র গঠন।
যদিও এই পরিকল্পনার সাফল্য এখন অনিশ্চিত।
মানুষ এখন সচেতন। বঙ্গোপসাগরের তলদেশের বিপুল সম্পদ রক্ষার লড়াই আজও চলছে।
ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই ইস্যু বাংলাদেশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষা।

 
                         
         
         
        