 
                  চট্টগ্রাম-নারায়ণগঞ্জ পাইপলাইন চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশে তেল পরিবহনে সময় ও খরচ কমিয়ে জ্বালানি সরবরাহে নতুন যুগের সূচনা। বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের জ্বালানি অবকাঠামোতে নতুন মাইলফলক যোগ হচ্ছে ১৬ আগস্ট ২০২৫। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৫০ লাখ লিটার ডিজেল পৌঁছবে রাজধানী ও আশপাশের জেলায়। ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার এই প্রকল্প শুধু সময় সাশ্রয় করবে না, বরং বছরে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা অর্থনৈতিক সাশ্রয়ও নিশ্চিত করবে।
আগে চট্টগ্রাম থেকে ডিজেল পরিবহন করতে শতাধিক কোস্টাল শিপ ব্যবহার করা হতো, যা সময় নিত অন্তত দেড় দিন।
এখন আধুনিক পাইপলাইনের মাধ্যমে সেই সময় সাশ্রয় হবে এক দিন বা তারও বেশি।
এটি শুধু পরিবহন খাতে নয়, সামগ্রিক জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খলেও এক বিপ্লব আনবে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অর্থায়নে শুরু হওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
পাইপলাইনের ব্যাসার্ধ চট্টগ্রাম থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ ইঞ্চি এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি।
কুমিল্লায় নতুন পেট্রোলিয়াম ডিপো স্থাপন এবং নারায়ণগঞ্জে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের জন্য আলাদা রিজার্ভার নির্মাণ করা হয়েছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সেন্ট্রাল অটোমেশন ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা।
পতেঙ্গার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পুরো পাইপলাইন পর্যবেক্ষণ করা যাবে, যার ফলে লিকেজ, চুরি বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা দ্রুত শনাক্ত ও সমাধান সম্ভব হবে।
বিপিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,
বছরে এই প্রকল্প থেকে আয় হবে প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৯০ কোটি টাকা খরচ বাদ দিয়ে ২৩৪ কোটি টাকা নিট সাশ্রয় হবে।
পরিবহন খরচ কমে গেলে দেশের জ্বালানি খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়তা করবে।
এছাড়া, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় দেশের মোট জ্বালানি তেলের প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যবহার হয়।
প্রথম পর্যায়ে বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহের পরিকল্পনা থাকলেও ভবিষ্যতে এই পাইপলাইন বাঘাবাড়ি-আশুগঞ্জ ও ভৈরব পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে।
তখন সরবরাহ বেড়ে দাঁড়াবে ২১ লাখ মেট্রিক টনে।
বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহ দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রপথ ও সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল ছিল, যা ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং আবহাওয়াজনিত সমস্যার মুখে পড়ত।
পাইপলাইন চালু হলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জ্বালানি সুরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে এক ধাপ এগিয়ে নেবে।
পাশাপাশি, পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরবরাহ দ্রুত হলে শিল্পাঞ্চল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পরিবহন খাত সরাসরি উপকৃত হবে।
এ কারণে এই প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত করতেও ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ চট্টগ্রাম-নারায়ণগঞ্জ পাইপলাইন চালুর মাধ্যমে এমন এক যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে জ্বালানি সরবরাহ হবে দ্রুত, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
এটি কেবল একটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়—বরং দেশের জ্বালানি খাতে টেকসই উন্নয়নের দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পাইপলাইন নেটওয়ার্ক দেশের সামগ্রিক জ্বালানি বিতরণ ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে, যা অর্থনীতি ও শিল্প উভয়ের জন্যই হবে এক গেম চেঞ্জার।

 
                         
         
         
        