গুলশানের চাঁদাবাজি মামলায় ইউনূস সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়ার নাম উঠে এসেছে ভাইরাল ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজে। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বলছে—এটি ক্ষমতার অপব্যবহার ও এনসিপির ভেতরের দুর্নীতির নগ্ন উদাহরণ।
রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছে গুলশানের কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলার একটি ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ। এই ফুটেজে দেখা গেছে, ইউনূস সরকারের স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রাত ৪টার দিকে হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে এসে অভিযুক্ত জানে আলম অপুর সঙ্গে কথা বলছেন। ঘটনা শুধু সময় ও স্থানের কারণে নয়, বরং এর পেছনের রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রশ্নগুলো দেশের জন্য অনেক বড় সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভিডিওতে অপু স্পষ্টভাবে বলেছেন,
চাঁদাবাজির অভিযানের আগে তার সঙ্গে উপদেষ্টার সরাসরি কথা হয় এবং পরিকল্পনা জানানো হয়।
অপুর দাবি, অভিযান পরিচালনার আগে গুলশান জোনের ডিসি ও এসিকে জানানো হয়েছিল, কিন্তু মিডিয়ায় এই বিষয়টি ‘গায়েব’ হয়ে যায়।
এ থেকেই প্রশ্ন উঠেছে—সরকারি কাঠামো ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভেতরে আসলে কী ধরনের গোপন সমন্বয় চলছে?
অপু অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনায় শুধু একজন নয়, আরও “ভাইয়েরা” জড়িত।
যাদের একসময় সাধারণ স্কুটিতে চলাফেরা করতে দেখা যেত, তারা এখন দামি মোটরসাইকেল, ফাইভ স্টার হোটেলের জীবনযাত্রা—এমন হঠাৎ সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে যে অস্বচ্ছ অর্থনৈতিক উৎস রয়েছে, তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এনসিপি সরকারের শুরুর দিক থেকেই নিয়োগ বাণিজ্য, দখল বাণিজ্য, তদ্বির ব্যবসা এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল।
কিন্তু সেগুলো প্রমাণ সহ সামনে এলেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মঞ্জুরুল আলম পান্না সঠিকভাবেই উল্লেখ করেছেন—
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই শোকজ নোটিশ দেওয়া হচ্ছে, অথচ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছিল।
এটি শুধু রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের অভাব নয়, বরং দল ও সরকারের ভেতরে দ্বন্দ্ব, গোষ্ঠীসংঘাত এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের এক নগ্ন প্রতিচ্ছবি।
বিশেষ করে যখন একজন উপদেষ্টা রাত ৪টার সময় চাঁদাবাজির অভিযানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে ভিডিও প্রমাণে ধরা পড়েন,
তখন প্রশ্ন জাগে—এটি কি কেবল ব্যক্তিগত লোভ, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো ক্ষমতার খেলা চলছে?
অপুর ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ প্রমাণ করে যে, ঘটনার পরপরই এটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলেও গণমাধ্যমে খবর আসতে বিলম্ব হয় বা সেটি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়—এটি নতুন কিছু নয়।
এই ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রথম পর্যায়ে গণমাধ্যমে বড় করে তোলার সাহস কেউ দেখায়নি, যতক্ষণ না ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
যদি এই অভিযোগের তদন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে হয়, তাহলে এনসিপি সরকারের জন্য এটি ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটে রূপ নিতে পারে।
কারণ, এই ঘটনা ক্ষমতাসীনদের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে।
অন্যদিকে, যদি ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়, তাহলে সরকারের ওপর জনগণের অবিশ্বাস আরও গভীর হবে, যা ভবিষ্যতের নির্বাচনী সমীকরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
রাত ৪টায় গুলশানের রাস্তায় উপদেষ্টার উপস্থিতি কেবল ব্যক্তিগত কৌতূহলের বিষয় নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির রোগ কতটা গভীরে গেঁথে আছে তার প্রমাণ।
এই ঘটনা প্রমাণ করে—স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়া কোনো সরকারই জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পারে না।
