ঢাকা থেকে নিখোঁজের পর সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধপন্থী অবস্থান, জামায়াতের হুমকি ও প্রেস উইংয়ের চাপ—সব মিলিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ ভয়াবহ সংকটে।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা অঙ্গন আরেকটি করুণ অধ্যায় সাক্ষী হলো। মুক্তিযুদ্ধপন্থী অবস্থানে আপোষহীন থাকা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার (৭১) নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে বের হওয়ার পর তিনি আর ফেরেননি। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি একটি লেখা পাঠান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে—ফুটনোটে লিখে যান, “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।”
শেষ লেখায় বিভুরঞ্জনের বেদনা
বিভুরঞ্জনের শেষ লেখায় উঠে আসে তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিকজীবনের লড়াই, হতাশা ও বঞ্চনার কথা।
- তিনি স্পষ্ট লেখেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর অবস্থান ছিল স্বাধীনতার পক্ষে।
- অথচ এই অবস্থানকেই আজীবন “আওয়ামী ট্যাগ” হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
- আওয়ামী লীগ সরকারে থেকেও তিনি পাননি কোনো প্লট, ভালো চাকরি বা সুযোগ-সুবিধা।
- বরং চাকরিহীনতা, ঋণের বোঝা ও স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে গেছেন তিনি।
আজকের পত্রিকায় চার বছর চাকরির পরও পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি পাননি তিনি। বরং ভেতরকার অনিয়ম, রাজনৈতিক চাপ ও সম্পাদকীয় ভয়ের কারণে তাঁর অবস্থান হয় ক্রমেই অনিশ্চিত।
প্রেস উইংয়ের চাপ ও সেনা-রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ
নিজের শেষ লেখায় বিভুরঞ্জন সরাসরি অভিযোগ করেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং মুক্ত সাংবাদিকতার পথে অন্যতম বড় বাধা।
- তাঁর লেখা অনলাইনে প্রকাশ হলে ফোনে চাপ আসে তা সরাতে।
- সহকর্মী মাজহারুল ইসলাম বাবলার লেখার জন্যও সম্পাদকীয় বোর্ডকে চোটপাট করা হয়।
- সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সামরিক হেলিকপ্টারে দিল্লি পাঠিয়েছে—এমন তথ্য লেখায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পত্রিকার বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া হয়।
বিভুরঞ্জনের অভিযোগ, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা মুখে মুক্ত সমালোচনার কথা বলেন, বাস্তবে তাঁর প্রেস উইং লেখালেখির স্বাধীনতাকে দমিয়ে রাখছে।
জামায়াতের হুমকি ও ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ তকমা
মৃত্যুর আগে বিভুরঞ্জন সরকারকে একাধিকবার হুমকি দেওয়া হয় জামায়াত সমর্থিত গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। তাঁকে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে ছবি সম্বলিত ব্যানার টানানো হয় এবং তাতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করা হয়। শুধু বিভুরঞ্জন নন, এই তালিকায় ছিলেন শিল্পী-সাংবাদিক থেকে শুরু করে অভিনেতা, ক্রিকেটার—মোট কয়েক ডজন বিশিষ্টজন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জামায়াতের এই হুমকি সরাসরি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অবরুদ্ধ করছে এবং সাংবাদিক-শিল্পীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
গণমাধ্যমের ভয়াবহ সংকট
বিভুরঞ্জনের মৃত্যু আলাদা কোনো ঘটনা নয়, বরং বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের সার্বিক সংকটের প্রতিফলন।
- ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সময় টিভির তিনজন শীর্ষ সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হন।
- একই বছর অক্টোবর-নভেম্বরে তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) ১৬৭ জন সাংবাদিকের এক্রিডিটেশন বাতিল করে।
- আন্তর্জাতিক সংস্থা এইচআরডব্লিউ জানায়, জুলাইয়ের অস্থিরতায় ১৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়, ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা।
- টেলিভিশন ও পত্রিকায় সম্পাদকীয় নীতির নামে চাকরিচ্যুতি, অনলাইন কনটেন্ট সেন্সরশিপ ও ভয় দেখানো এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
প্রেস উইংয়ের সাজানো নাটকও গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। উদাহরণস্বরূপ, ঈদুল আজহার নামাজ শেষে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে “স্যার, আপনাকে পাঁচ বছর চাই”—এই নাটকীয় ঘটনাটি পরে প্রেস উইং পরিকল্পিত প্রচারণা হিসেবে সামনে আনে।
সত্য বলার মাশুল ও বিভুরঞ্জনের প্রতীকী মৃত্যু
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু আসলে সেই প্রমাণ যে, মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপোষহীন থাকা আজও ভয়াবহ ঝুঁকি ডেকে আনে।
- মুক্তিযুদ্ধপন্থী অবস্থান তাঁকে জীবনে পুরস্কার দেয়নি, বরং হুমকি ও অবমাননা দিয়েছে।
- সাংবাদিকতা মানে সাহস—এই বিশ্বাসে তিনি সত্য লিখে গেছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
- কিন্তু এই সত্যই তাঁকে পরিণত করেছে টার্গেটে।
তাঁর মৃত্যু প্রতীক হয়ে দাঁড়ালো—বাংলাদেশের গণমাধ্যম আজ এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে প্রশ্ন করার অপরাধে সাংবাদিককে নিখোঁজ বা মৃত হতে হয়।
শেষকথা
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু নিছক একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়; এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মৃত্যুবার্তা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন সাংবাদিককে প্রাণ হারাতে হলো রাজনৈতিক চাপ, প্রেস উইংয়ের হস্তক্ষেপ ও জামায়াতি হুমকির কারণে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে আজ সবচেয়ে জরুরি—
- সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
- রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা,
- এবং মুক্তিযুদ্ধপন্থী কণ্ঠস্বরকে রক্ষা করা।
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু আমাদের সেই দায়িত্ব নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়।

হারামখোর রাজাকার/পায়ুনুল/ নুনুস বুইড়াখাটাসের পায়ু চাটা রুহানী জারজ সন্তানদের বেশ ভালোই হাইব্রিড চাষ হইতাছে ইদানীং #বাঙ্গুদেশে ……..