যশোরের ঝিকরগাছায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ছাত্রদলের দুই বহিষ্কৃত নেতাসহ চারজনের নামে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ছাত্ররাজনীতি, নারী নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবের ভয়াবহ দিক উন্মোচিত হয়েছে।
যশোরের ঝিকরগাছায় এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চারজনের নামে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ, যারা ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরপরই সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হন। সমাজে নারী নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৫ মার্চ দুপুরে ভুক্তভোগী নারী তার শিশু সন্তানকে নিয়ে বেনাপোল থেকে নিজ বাড়ির পথে রওনা হন।
পথে গদখালি বাজারে পরিচয় হয় ছাত্রদল নেতা ইয়াসিন আরাফাতের সঙ্গে।
বন্ধুত্বের ছলে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়ার পর তাকে একটি লিচু বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে অপর আসামি আল মামুন হোসেন বাপ্পী, জাবেদ হোসেন ও আমিনুর রহমান মিলে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
অসুস্থ অবস্থায় ভুক্তভোগীকে তার সন্তানসহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় আসামিরা।
পুলিশ খবর পেয়ে নারীটিকে উদ্ধার করে এবং চার আসামিকেই গ্রেপ্তার করে।
মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।
এই ঘটনার পরপরই যশোর ও ঝিকরগাছায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্তরা ছাত্রদলের পদে থাকায় সংগঠনটির ভাবমূর্তি নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে।
ফলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই নেতাকে বহিষ্কার করে।
অন্যদিকে, বিএনপি নেত্রী অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে সহানুভূতি জানান।
যদিও অনেকে এটিকে রাজনৈতিক ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ হিসেবে দেখছেন।
বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় ক্যাডার তৈরির একটি মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ছাত্রদের শিক্ষার পরিবর্তে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
ফলে সহিংসতা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধে ছাত্রনেতাদের সম্পৃক্ততা প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
ঝিকরগাছার ধর্ষণ মামলাটি প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতাদের প্রশ্রয়ে এসব অপরাধীরা বেড়ে ওঠে।
দল থেকে বহিষ্কার বা সাময়িক শাস্তি দিলেই সমস্যার সমাধান হয় না।
বরং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের ভেতরকার অপরাধীদের সঠিকভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে সহায়তা করা।
বাংলাদেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও নারী নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
আইনের শাসন দুর্বল হওয়ায় এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর কারণে অধিকাংশ অপরাধী শাস্তি থেকে রেহাই পায়।
এ অবস্থায় ভুক্তভোগী নারীর সাহসিকতা এবং চার্জশিট পর্যন্ত পৌঁছানো ইতিবাচক দিক হলেও, বিচার প্রক্রিয়ার গতি ও ফলাফলই শেষ পর্যন্ত সমাজের কাছে আস্থা ফিরিয়ে আনবে।
ঝিকরগাছার এই ধর্ষণ মামলা শুধু একটি অপরাধের বিচারের বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি, নারী নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন।
এখন দেখা বাকি থাকে, আদালত ও রাষ্ট্র কি সত্যিকার অর্থে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে, নাকি এটি আবারও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় হারিয়ে যাবে।
