 
                  উদ্বোধনের পরদিনই তিস্তা দ্বিতীয় সেতু থেকে ৩০০ মিটার বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি, ৯২৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পে নিরাপত্তা সংকট ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাব প্রকাশ পেয়েছে।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামবাসীর স্বপ্ন পূরণ করেছে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা দ্বিতীয় সেতু। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস্তবায়িত ৯২৫ কোটি টাকার এই সেতুটি নদী-বেষ্টিত দুই জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। অথচ উদ্বোধনের একদিনের মাথায় ঘটে গেল একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা—চুরি হয়ে গেল প্রায় ৩০০ মিটার বৈদ্যুতিক ক্যাবল।
সেতুটি বুধবার উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন ল্যাম্পপোস্টগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তখনই ধরা পড়ে ভয়াবহ এই চুরির ঘটনা।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান মিলন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে, ক্যাবল কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে সেতুটি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে গেছে।
চুরির ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মন্তব্য উঠে এসেছে।
কেউ লিখেছেন—“আমরা সামান্য ক্যাবলের লোভ সামলাতে পারলাম না।”
আবার কেউ বলছেন, “এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো সেতুর রডও খুলে নিয়ে যাবে চোরচক্র।”
এই মন্তব্যগুলো কেবল ক্ষোভ প্রকাশ নয়, বরং দেশের অবকাঠামোগত অর্জনকে নিরাপদ রাখার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
সেতুটি নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার, সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (SFD) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (OFID) প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৯.৬ মিটার প্রস্থ এবং ৩১টি স্প্যান সমৃদ্ধ এই সেতু ইতোমধ্যে ‘মাওলানা ভাসানী সেতু’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, শুধু একটি সেতুই নয়—এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও জাতীয় উন্নয়নের প্রতীক।
কিন্তু উদ্বোধনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে—বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা কি কেবল অবকাঠামো দাঁড় করাতেই ব্যস্ত, নাকি তার স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ পরিকল্পনা নেই?
ক্যাবল চুরির ঘটনা দুই দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশাসনিক ব্যর্থতা: উদ্বোধনের পরই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকা।
সামাজিক দায়বদ্ধতার সংকট: সাধারণ মানুষই যখন উন্নয়ন প্রকল্পের সম্পদ রক্ষায় সচেতন নয়, তখন রাষ্ট্রের একক প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয় না।
এই চুরিকে কেবল অপরাধ হিসেবে দেখা যাবে না, বরং এটি সমাজের নৈতিকতা ও নাগরিক দায়িত্ববোধেরও প্রতিফলন।
তিস্তা দ্বিতীয় সেতু উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি, কৃষি ও শিল্পের জন্য একটি যুগান্তকারী সংযোগ।
কিন্তু উদ্বোধনের একদিনের মধ্যেই ক্যাবল চুরি প্রমাণ করেছে—অবকাঠামো দাঁড় করানো যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই জরুরি এর নিরাপত্তা ও সামাজিক রক্ষণাবেক্ষণ।
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শুধু আন্তর্জাতিক অর্থায়নে দাঁড়ানো ইট-পাথরের কাঠামো নয়; এগুলো একটি জাতির অগ্রগতির প্রতীক।
তাই এর নিরাপত্তায় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনগণের যৌথ উদ্যোগ অপরিহার্য।

 
                         
         
         
         
         
        