 
                  রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে ইতিমধ্যেই সাড়ে ১০ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। দেশের বিদ্যুৎ খাত ও অর্থনীতিতে কীভাবে অবদান রাখছে এই কেন্দ্র, পড়ুন বিশ্লেষণধর্মী কলামে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছে। তবে সব সমালোচনার বাইরে দাঁড়িয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নীরবে দেশের অর্থনীতিকে শক্তি জোগাচ্ছে। জাতীয় গ্রিডে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১০ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কেন্দ্রটি প্রমাণ করেছে—দীর্ঘ পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব থাকলে জ্বালানি খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা ১,৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট চালু করে এবং ২০২৪ সালের মার্চে দ্বিতীয় ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়।
বর্তমানে উভয় ইউনিট পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
পরিসংখ্যান বলছে—
২০২৫ সালের জুনে কেন্দ্রটি ৬৭৬.৭৩ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ে।
ইউনিট–১ থেকে ১৫ জুনে ১০০.৪৬% দৈনিক সক্ষমতা অর্জিত হয়।
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে (Q4) কেন্দ্রের ডিসি রেকর্ড ৯২.২%।
এমন নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন কেবল জাতীয় গ্রিডকেই শক্তিশালী করছে না, বরং দেশের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানকে টেকসই করছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রামপাল কেন্দ্র বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে ৭–৮% বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
এ সরবরাহ কেবল শিল্পকারখানার উৎপাদনশীলতাই বাড়াচ্ছে না, স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রাণ সঞ্চার করছে।
স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান
নারী ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট
অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন
এসব কার্যক্রম রামপালকে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নয়, বরং একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পে পরিণত করেছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কয়লার সরবরাহ।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বকেয়া পাওনা আটকে থাকার পরও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিরবচ্ছিন্ন কয়লা দিয়েছে।
ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়াতে ৪–৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রাখার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
বুয়েটের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেনের মতে, দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
দেশীয় গ্যাসের মজুদ কমছে, আর অতিরিক্ত এলএনজি আমদানিও সীমিত।
ফলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিই এখন কার্যত দেশের জন্য নির্ভরযোগ্য বিকল্প।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ইতিমধ্যেই ভেতরে ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
ভবিষ্যতে এটি বাড়িয়ে ৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ উদ্যোগ কেবল উৎপাদন ব্যয় কমাবে না, জাতীয় গ্রিডে পরিচ্ছন্ন শক্তির যোগানও নিশ্চিত করবে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে পরিবেশগত সমালোচনা থাকলেও বাস্তবতায় এটি দেশের বিদ্যুৎ ও অর্থনীতির জন্য এক অনস্বীকার্য অবদান রাখছে।
বর্তমানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার প্রধান ভিত্তি হয়ে উঠেছে।
তবে টেকসই উন্নয়নের জন্য একই সঙ্গে সৌর ও নবায়নযোগ্য শক্তির দিকেও নজর বাড়াতে হবে।
রামপালের সাম্প্রতিক সৌরবিদ্যুৎ উদ্যোগ হয়তো সেই পথচলার প্রাথমিক ধাপ।

 
                         
         
         
        