 
                  টিআইবি সতর্ক করেছে, কর্তৃত্ববাদ পতনের পর দেশজুড়ে দখল, চাঁদাবাজি ও মবতন্ত্রের পুনরুত্থান নতুন বন্দোবস্তের জন্য অশনিসংকেত। রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহির ঘাটতি গণতান্ত্রিক বিকাশকে হুমকির মুখে ফেলছে।
বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদ পতনের পর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিকাশের যে প্রত্যাশা ছিল, তা আজ ভেঙে পড়ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)–এর সাম্প্রতিক বিবৃতিতে উঠে এসেছে—দেশজুড়ে দখল, চাঁদাবাজি, মামলা–জামিন বাণিজ্য, ট্যাগ বাণিজ্য, সহিংসতা ও ‘মবতন্ত্র’-এর পুনরুত্থান এক অশনিসংকেত।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান স্পষ্ট করেছেন,
কর্তৃত্ববাদ পতনের পর প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের একাংশ অতীতের সরকারি দলের মতোই বহুমুখী ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত হয়েছে।
এতে বোঝা যাচ্ছে, ‘নতুন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার যে গণআকাঙ্ক্ষা ছিল, তা দলীয় স্বার্থে পদদলিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক সংস্কারে আত্মজিজ্ঞাসার পরিবর্তে ‘এবার আমাদের পালা’ মানসিকতা দলীয় আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও পদবাণিজ্যের মাধ্যমে আবারও স্বাভাবিকতায় পরিণত হচ্ছে।
এতে স্থানীয় পর্যায়ে সহিংস কোন্দল এমনকি হরতাল ঘোষণার মতো বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছে।
টিআইবি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, কোনো কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও অতিক্ষমতায়িত গোষ্ঠী ‘মবতন্ত্র’-এর মুখোশে সংখ্যালঘু, নারী, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ করছে।
সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী কর্মকাণ্ডের ওপর নির্মম আঘাত পড়ছে।
এটি শুধু গণতান্ত্রিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং সমাজে ভীতি ও বিভাজন বাড়াচ্ছে।
অতীতে যেমন দেখা গেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসন কার্যকর প্রতিকারের বদলে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
টিআইবির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও দখলদারিতে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা নিচ্ছে।
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি ছিল সুশাসন, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি।
কিন্তু তাদের নেতাকর্মীর একাংশও চাঁদাবাজি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে।
ফলে অতীতের অসুস্থ রাজনীতির রোল মডেল আবারও পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে।
যদি রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি, গণতান্ত্রিক পরিচালনা ও নৈতিক চর্চা নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে জুলাই আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদ ও আহতদের ত্যাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
জনগণের হতাশা বাড়বে এবং গণতান্ত্রিক বিকাশের পথ আরও সংকুচিত হবে।

 
                         
         
         
        