জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে বাবার জবানবন্দি, ভিডিও প্রমাণ ও পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উঠে এসেছে নতুন তথ্য। গুলি নয়, মাথার পেছনের আঘাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বলে বিশ্লেষকদের মত।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ—যিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ হিসেবে চিহ্নিত—তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে আদালত, পরিবার ও বিশ্লেষকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাবার জবানবন্দি, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও ভিডিও প্রমাণের আলোকে স্পষ্ট হচ্ছে, আবু সাঈদের মৃত্যু শুধুই পুলিশের গুলিতে নয়; বরং মাথার পেছনে একটি ঢিল জাতীয় বস্তুর আঘাতই ছিল তাঁর মৃত্যুর প্রধান কারণ।
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন আদালতে বলেন,
“লাশ গোসল করানোর সময় দেখি, মাথার পেছনে রক্ত ঝরছে। বুকে গুলির চিহ্ন ছিল।”
তিনি আরও জানান, “প্রশাসন রাতেই দাফনের জন্য চাপ দিয়েছিল, কিন্তু আমি রাজি হইনি।
পরদিন সকাল ৯টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়।”
বাবার এই জবানবন্দি থেকে স্পষ্ট হয়, মৃত্যুর একদিন পরও মাথার ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল—যা কোনো সাধারণ আঘাতের চিহ্ন নয়।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের সামনে দাঁড়ানোর মুহূর্তে আবু সাঈদের মাথার পেছনে কিছু একটা আঘাত করে।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাথায় হাত দেন।
এরপর তাঁর ঘাড় রক্তে ভিজে যায়।
পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, মাথার পেছনে ১-২ ইঞ্চি গভীর ক্ষত থেকে অবিরাম রক্তক্ষরণ হয়েছে।
অথচ শরীরে পাওয়া ছররা গুলির আঘাতে রক্তপাত হয়নি।

ফলে বিশ্লেষকদের মতে, মৃত্যুর মূল কারণ ছররা গুলি নয়, বরং মাথার পেছনে ঢিলের আঘাতজনিত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।
বিশ্লেষকদের মতে, আবু সাঈদ মাথায় আঘাত পাওয়ার পরপরই যদি সহপাঠীরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেত, তাহলে হয়তো তার মৃত্যু হতো না।
বরং দেখা যায়, সহপাঠীরা আঘাত পরীক্ষা করলেও চিকিৎসায় এগোয়নি।
এ কারণে মৃত্যুর জন্য সহপাঠীদের অবহেলাকেও দায়ী করা হচ্ছে।
আবু সাঈদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলির অভিযোগই প্রাধান্য পেয়েছে।
তবে তাঁর শরীরের উন্মুক্ত অংশ রক্তে ভিজে না যাওয়া, ছররা গুলির তুলনায় মাথার ক্ষতকে অধিক প্রাণঘাতী প্রমাণ করা, এবং বাবার জবানবন্দি—সবকিছুই প্রমাণ করে যে মাথার পেছনের আঘাতই ছিল মৃত্যুর চূড়ান্ত কারণ।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যে সহিংসতা হয়েছিল, তার মধ্যে আবু সাঈদের মৃত্যু বিশেষভাবে আলোচিত।
এটি শুধু পুলিশের গুলির বিষয় নয়, বরং আন্দোলনের অরাজক পরিস্থিতি, সহপাঠীদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং রাষ্ট্রীয় দমননীতি—সবকিছুর এক মিশ্র চিত্র।
আদালতে বাবার সাক্ষ্য এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টে পাওয়া তথ্য প্রমাণ করে, আবু সাঈদের মৃত্যু ছিল একদিকে রাষ্ট্রীয় সহিংসতার প্রতীক, অন্যদিকে আন্দোলনের বিশৃঙ্খলার ফল।
এই মামলার ভবিষ্যৎ বিচার প্রক্রিয়া শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং জুলাই অভ্যুত্থানের সামগ্রিক সত্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
