 
                  সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা, বাহাত্তরের সংবিধান, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত নিয়ে কোনো আপস হবে না। কেন এই আহ্বান আজ জরুরি, বিশ্লেষণ পড়ুন এখানে।
২৮ আগস্ট ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) অনুষ্ঠিতব্য ‘মঞ্চ ৭১ এর গোলটেবিল বৈঠক’ ভন্ডুল হওয়ার পর ফেসবুক লাইভে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন—
“স্বাধীনতা, বাহাত্তরের সংবিধান, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের প্রশ্নে মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ হন।
এখন শেষ সময়।”
তাঁর বক্তব্য শুধু একটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, বরং বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তোলে।
পান্না অভিযোগ করেন, রিপোর্টার্স ইউনিটির ভেতরেই কিছু সমন্বয়ক নামধারী ব্যক্তি হট্টগোল ও স্লোগান দিয়ে সভা পণ্ড করে দেয়।
এর মাধ্যমে তিনি দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে—এই পর্যবেক্ষণ নতুন নয়।
তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি আহ্বান এ প্রেক্ষাপটকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করেছে।
ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা: একাত্তরে যারা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা এনেছিলেন, তাঁদের কণ্ঠ আজও বাংলাদেশের নৈতিক শক্তির প্রতীক।
সংবিধানের প্রশ্ন: বাহাত্তরের সংবিধান ছিল একটি মুক্তিকামী রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বারবার সংশোধনের ফলে সেই চেতনা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে।
গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই: গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
প্রজন্মগত সেতুবন্ধন: নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার মূল মূল্যবোধের সঙ্গে যুক্ত রাখতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ।
জেড আই খান পান্নার আহ্বান শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি নৈতিক প্রশ্নও।
- যদি মুক্তিযোদ্ধারা ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক আনুগত্যে বিভক্ত থাকেন, তাহলে স্বাধীনতার অর্জন ও মূল্যবোধ হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
- তাঁর বার্তা আসলে এক ধরনের সতর্কবার্তা—“এখন শেষ সময়”, অর্থাৎ আগামী প্রজন্মের জন্য স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্য অপরিহার্য।
জেড আই খান পান্নার বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির অর্জন নয়, এটি একটি সামষ্টিক লড়াইয়ের ফল।
আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্য কেবল স্মৃতির আবেগ নয়, বরং রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের অস্তিত্ব রক্ষার পূর্বশর্ত।
বাংলাদেশের ইতিহাসে যেভাবে মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পথপ্রদর্শক ছিলেন, আজও হয়তো তাঁদেরই ঐক্য নতুন এক পথ দেখাতে পারে।

 
                         
         
         
        