 
                  ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা ও জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার এবং AQIS-এর সংশ্লিষ্টতা বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে। গ্রেপ্তার শামীন মাহফুজ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব বিশ্লেষণ।
ঢাকার বারিধারায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক একটি গোয়েন্দা তথ্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া-এর প্রতিষ্ঠাতা শামীন মাহফুজকে কেন্দ্র করে আবারও উত্থাপিত হয়েছে জঙ্গিবাদ, কূটনৈতিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের হুমকি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক বৈঠক ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, হামলার পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত গোপনীয় এবং প্রাণঘাতী।
মূলত দূতাবাসে কর্মরত মার্কিন ও বাংলাদেশি মুসলিম কর্মীদের লক্ষ্য করেই অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দূতাবাস সংলগ্ন মাঠে ক্রিকেট খেলার ছলে রেকি করার কৌশল নেওয়া হয়েছিল, যা প্রমাণ করে কৌশলগতভাবে সংগঠিত হামলার চেষ্টা করা হচ্ছিল।
শামীন মাহফুজ এর আগেও বহুবার জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানভিত্তিক তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এখন নতুন করে তদন্তাধীন।
এটিইউ সূত্র জানাচ্ছে, তিনি যদিও এজাহারভুক্ত আসামি নন, তবুও তার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় সন্দেহ তৈরি করছে।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তারা ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন।
চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন এবং পরবর্তীতে মেগান বোলডিন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন।
আলোচনায় মূল ফোকাস ছিল সন্ত্রাসবাদ দমন, কূটনৈতিক নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পরিষ্কারভাবে বলেন, বাংলাদেশে সংগঠিত জঙ্গিবাদ বর্তমানে সক্রিয় নয়, তবে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো মাঝেমধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ইতোমধ্যেই বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মার্কিন দূতাবাস তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করতে Special Program for Embassy Augmentation and Response (SPEAR) কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ পুলিশের সহায়তায় একটি কুইক রেসপন্স ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করছে।
এই ঘটনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে দুটি বড় বার্তা দেয়—
আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সক্রিয়তা: বাংলাদেশ যদিও গত কয়েক বছর সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে সফল হয়েছে, তবে AQIS, TTP-এর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এখনো বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে চাইছে।
কূটনৈতিক নিরাপত্তার গুরুত্ব: বাংলাদেশ একটি কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে রয়েছে।
ফলে বিদেশি মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ এ বিষয়ে বিশেষত সংবেদনশীল।
মার্কিন দূতাবাসকে ঘিরে এই হামলার পরিকল্পনা প্রমাণ করে, জঙ্গিবাদ কখনোই পুরোপুরি সমূলে উৎপাটন হয়নি।
বরং তা সুপ্ত অবস্থায় থেকে মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয় এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এ ধরনের হুমকি মোকাবিলা করা কঠিন।
বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান কঠোর পদক্ষেপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা—দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ তৈরি করেছে।

 
                         
         
         
        