সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বিএনপি সভাপতির গুদাম থেকে সাড়ে ৩ টনের বেশি সরকারি চাল জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল কীভাবে রাজনৈতিক লুটপাটের খপ্পরে গেল, বিশ্লেষণ জানুন।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিএনপির সাবেক সভাপতির গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল জব্দ হওয়ার ঘটনা নতুন করে রাজনৈতিক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার মেঘাই এলাকায় পরিচালিত এই অভিযানে হতদরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত সাড়ে ৩ টনেরও বেশি চাল জব্দ হয়।
অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ামত আলী খান হিমেলের ভাষ্যমতে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়।
সেখান থেকে বিএনপি নেতা সোলাইমান হোসেনের গুদামে ৩,৫৭০ কেজি চাল উদ্ধার হয়।
একই সময় সাব্বির হোসেন নামের আরেক ব্যক্তির গুদাম থেকেও ২৫৪ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করা হয়।
এই ঘটনাই প্রমাণ করে—দারিদ্র্য বিমোচন বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের কাছে লুটপাটের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল—নিম্নআয়ের পরিবার যেন স্বল্পমূল্যে চাল কিনে ন্যূনতম খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
অথচ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেই চাল নিজেদের গুদামে মজুদ রাখছে, হয়তো পরে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করার জন্য।
এতে হতদরিদ্র মানুষের মুখের গ্রাস সরাসরি ছিনতাই হচ্ছে।
এই ঘটনায় বিএনপি নাম উঠে এলেও, বাস্তবতা হলো—এ ধরনের চাল চুরি বা লুটপাট শুধুমাত্র কোনো একটি রাজনৈতিক দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে—
কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এত শৈথিল্য যে, সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম রাজনৈতিক ব্যবসায় রূপ নিচ্ছে?
ভ্রাম্যমাণ আদালত উদ্ধার করা চাল স্থানীয় খাদ্যগুদামে সংরক্ষণ করেছে।
কিন্তু এতেই কি সমস্যার সমাধান হবে?
মূল প্রশ্ন হচ্ছে—এই চাল যাদের জন্য বরাদ্দ ছিল, সেই হতদরিদ্র মানুষের হাতে কীভাবে পৌঁছাবে?
আর অভিযুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে কি না, তা নিয়েই সংশয় থেকেই যায়।
এই ঘটনাটি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার নগ্ন রূপ তুলে ধরে।
জনগণের প্রাপ্য সহায়তা যদি প্রভাবশালী মহল হাতিয়ে নেয়, তবে সামাজিক বৈষম্য আরও গভীর হবে।
এখন সময় এসেছে—সরকার ও প্রশাসনকে স্বচ্ছ নজরদারি ও কঠোর জবাবদিহিতার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধকে রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে দমন করার।
