নাটোর শহরের জনসেবা ক্লিনিকে খ্যাতনামা চিকিৎসক ডা. এ এইচ এম আমিরুল ইসলামের গলা কাটা লাশ উদ্ধার। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড চিকিৎসক সমাজে শোক ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা নতুন কিছু নয়। তবে নাটোরে ঘটে যাওয়া সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডটি আবারও দেখিয়ে দিল, সমাজে নিরাপত্তাহীনতার শিকড় কতটা গভীরে। নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড়ে অবস্থিত জনসেবা ক্লিনিক থেকে পাওয়া যায় খ্যাতনামা চিকিৎসক ডা. এ এইচ এম আমিরুল ইসলামের (৬০) গলা কাটা লাশ। একজন চিকিৎসক, সমাজসেবক ও সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার মৃত্যু কেবল ব্যক্তিগত নয়—এটি একটি সামাজিক ট্র্যাজেডি।
১ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুর ২টার দিকে জনসেবা ক্লিনিকের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত ডা. আমিরুল ইসলাম ছিলেন নাটোর সিভিল সার্জন অফিসের সাবেক মেডিকেল অফিসার (MOCS), ড্যাব ও বিএমএর সাবেক আহ্বায়ক এবং জনসেবা ক্লিনিকের মালিক।
স্টাফরা জানান, দুপুর পর্যন্ত সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তার মরদেহ দেখতে পান।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নিজের কক্ষেই খুন হয়েছেন।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মুক্তাদির আরেফিন তার মৃত্যুকে “একজন আস্থাভাজন মানুষকে হারানো” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
চিকিৎসক সমাজে এ হত্যাকাণ্ড ভয় ও ক্ষোভ তৈরি করেছে।
ডা. আমিরুল কেবল চিকিৎসক নন, তিনি ড্যাব (ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এবং বিএমএর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
ফলে তার হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা, রাজনৈতিক যোগসাজশ অথবা অর্থনৈতিক স্বার্থ—সব দিকই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
জনসমক্ষে, নিজস্ব কর্মস্থলে একজন চিকিৎসককে এভাবে খুন করা আইনশৃঙ্খলার বড় ভঙ্গুর চিত্র তুলে ধরে।
প্রশ্ন উঠছে—
একজন সম্মানিত নাগরিক যদি তার নিজ ক্লিনিকেই নিরাপদ না হন, তবে সাধারণ মানুষ কোথায় নিরাপদ?
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীদের সনাক্তের কাজ চলছে।
তবে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব অনেক সময় অপরাধীদের সাহসী করে তোলে।
এই হত্যাকাণ্ড কেবল একটি পরিবার বা চিকিৎসক সমাজকে নয়, সমগ্র জনগণকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রের মানুষদের জন্য এটি নিরাপত্তাহীনতার নতুন বার্তা বয়ে আনল।
একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সমাজে সহিংসতার বিস্তৃতি আরেকবার সামনে এলো।
ডা. আমিরুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড নিছক একটি অপরাধ নয়—এটি একটি বার্তা, যা সমাজের গভীর অসুখের প্রতিফলন।
যদি এই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত ও স্বচ্ছ না হয়, তবে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে।
চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রকে এবার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
