খুলনায় রূপসা সেতুর নিচ থেকে সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর লাশ উদ্ধার। হাত ও মুখে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনাটি সাংবাদিক নিরাপত্তা সংকটের প্রতিচ্ছবি।
খুলনার খান জাহান আলী (রূপসা) সেতুর নিচে দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন-এর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর (৬০) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং গণমাধ্যম ও সাংবাদিক নিরাপত্তার বৃহত্তর সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর ডান হাত ও মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই তথ্য নিজেই সন্দেহ জাগায় যে এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি পরিকল্পিত সহিংস ঘটনা হতে পারে।
রবিবার (৩১ আগস্ট) রাত সোয়া আটটার দিকে স্থানীয় লোকজন প্রথমে মরদেহটি নদীতে ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
পরে রূপসা নৌ পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থলে পিবিআই, সিআইডি, র্যাব ও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করেন।
নিহত বুলুর শরীরে নীল গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ও আকাশি রঙের টি-শার্ট ছিল।
মরদেহটি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা, হামলা ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার সামনে এসেছে।
ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর মৃত্যু সেই তালিকায় নতুন সংযোজন।
প্রশ্ন উঠছে—গণতন্ত্রের প্রহরী বলে বিবেচিত সাংবাদিকরা যদি জীবন-ঝুঁকিতে পড়েন, তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনস্বার্থ রক্ষার জায়গাটি কতটা সুরক্ষিত?
বুলু খুলনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজে) সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকরা প্রায়ই দুর্নীতি, অপরাধচক্র বা ক্ষমতাসীনদের স্বার্থবিরোধী প্রতিবেদন করায় হুমকি ও চাপের মুখে পড়েন।
এ ক্ষেত্রে হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত বিরোধ, রাজনৈতিক স্বার্থ কিংবা অপরাধচক্রের প্রতিশোধ—সবই তদন্তে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
একজন সাংবাদিকের মৃত্যু শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি সমাজের তথ্য জানার অধিকারের ওপরও আঘাত।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
একই সঙ্গে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের কর্মীদের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
খুলনায় ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি শুধু একটি শোকাবহ খবর নয়—এটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতে নিরাপত্তা সংকটের গভীর প্রতীক।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া এই রহস্যের জট খুলবে না।
আর যদি ন্যায়বিচার না হয়, তবে এটি সাংবাদিক সমাজের আস্থাহীনতা ও ভয়ের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
