 
                  নোয়াখালীতে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগে বিএনপির সাবেক নেতা গ্রেপ্তার। এই ঘটনা বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক অপব্যবহারের বড় প্রশ্ন তুলেছে।
বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় স্বল্প আয়ের মানুষ ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক ক্ষেত্রেই এই মহৎ উদ্যোগ রাজনৈতিক অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কালোবাজারির শিকার হচ্ছে। নোয়াখালীতে বিএনপির এক সাবেক নেতা অজি উল্যাহর গ্রেপ্তার সেই বাস্তবতাকেই আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার ছিলেন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অজি উল্যাহ।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি বরাদ্দের চাল বাজারে বিক্রি করছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা তিন বস্তা চালসহ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
এই ঘটনাটি শুধু একজন ব্যক্তির অনিয়ম নয়, বরং এটি প্রমাণ করে কিভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যসামগ্রী লুটপাট হচ্ছে।
বিশেষত, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা দ্রুত এ ধরনের সুযোগ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।
সরকারি কর্মসূচি মূলত দলমতের ঊর্ধ্বে সবার জন্য।
কিন্তু স্থানীয় বাস্তবতায় ডিলারশিপ দেওয়া হয় রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে।
এর ফলে অনেক সময় প্রকৃত দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত হন আর চাল কালোবাজারে চলে যায়।
এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হলো—বিএনপিও ক্ষমতায় আসুক বা ক্ষমতাহীন অবস্থায় সুযোগ পাক, তারা একই দুর্নীতির চক্রে জড়িয়ে পড়ে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিম্নবিত্ত শ্রেণি।
তারা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্যের সঙ্গে লড়াই করছে।
এই অবস্থায় সরকারি সহায়তার চাল যদি পৌঁছায় না, তবে সামাজিক ক্ষোভ বাড়বে, এবং রাষ্ট্রের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাবে।
ডিলার নিয়োগে দলীয় কোটা থাকা উচিত কি?
ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করে চালের হিসাব রাখা সম্ভব কি না?
স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কর্মসূচির স্বচ্ছতা কতটা নিশ্চিত করা যাবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা না গেলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বারবার অপব্যবহারের শিকার হবে।
নোয়াখালীর এই ঘটনা বাংলাদেশের প্রশাসন, রাজনীতি ও সামাজিক নৈতিকতার এক নগ্ন বাস্তবতা উন্মোচন করেছে।
জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত চাল যদি দলীয় প্রভাবশালীদের হাতে কালোবাজারে বিক্রি হয়, তবে তা কেবল আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়, এটি মানবিক অপরাধও বটে।
এখন প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতিবাজদের দলীয় পরিচয় নয়, অপরাধী হিসেবে বিচারের আওতায় আনা।

 
                         
         
         
         
         
        