গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে দুর্গাপূজা মণ্ডপে প্রতিমায় জঙ্গি হামলা রাষ্ট্রীয় নিরপেক্ষতার প্রশ্ন উসকে দিয়েছে। প্রশাসনের নীরবতা ও মৌলবাদীদের উত্থান নিয়ে বিশ্লেষণ।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার হামিন্দপুর কামারপাড়া এলাকায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিমা নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই জঙ্গি ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর হামলার ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ধর্মালম্বীদের পূজা-আর্চনা আসলেই কি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সুরক্ষিত?
১ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১টার দিকে সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে প্রতিমায় আগুন ধরিয়ে দেয় একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত।
এতে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশসহ প্রতিমার সমস্ত সরঞ্জাম ভস্মীভূত হয়ে যায়।
এ ঘটনা কেবল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ক্ষতি নয়, বরং বাংলাদেশের বহুত্ববাদী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর সরাসরি আঘাত।
বর্তমান সুদি ইউনুস সরকারের আমলে এবং সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামানের নেতৃত্বে এমন আক্রমণ নতুন নয়।
বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সনাতনী উপাসনালয়, মন্দির এবং দুর্গাপূজা মণ্ডপে হামলা যেন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিবারই স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না।
তারা নিরব দর্শকের ভূমিকায় থেকে কেবল ঘটনার পর “তদন্ত চলছে” বলে দায়সারা বক্তব্য দেয়।
এই প্রশাসনিক নীরবতা আসলে কি রাষ্ট্রীয় মদদকেই নির্দেশ করছে?
প্রশ্ন উঠছে—রাষ্ট্রযন্ত্র কি ইচ্ছাকৃতভাবে সনাতনী জনগোষ্ঠীকে অসুরক্ষিত রেখে মৌলবাদীদের জন্য খোলা ময়দান তৈরি করছে?
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সংখ্যালঘুদের জন্য সবচেয়ে বড় মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল।
অথচ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও হিন্দু সম্প্রদায়কে প্রতিবার দুর্গোৎসব কিংবা কালীপূজার আগে ভয়ে ভীত থাকতে হচ্ছে।
২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতা, ২০১২ সালে কক্সবাজার-রামুতে বৌদ্ধ মন্দির পোড়ানো, কিংবা ২০২১ সালে কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে গুজব ছড়িয়ে হামলার ঘটনা—সবকিছুই একই ধারাবাহিকতার অংশ।
আজকের হামিন্দপুর ঘটনা দেখিয়ে দিলো, মৌলবাদীরা রাষ্ট্রীয় সহনশীলতা পেয়ে আবারও শক্তি সঞ্চয় করছে।
বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, “ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে।”
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সনাতনী সম্প্রদায় তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব উদযাপনেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
রাষ্ট্র যদি সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে গণতন্ত্রের দাবি কেবল একটি ফাঁকা বুলি হয়ে দাঁড়াবে।
জঙ্গি ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার বিচার হতে হবে।
সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে—বাংলাদেশ কোনো ধর্মীয় মৌলবাদের রাষ্ট্র নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহুত্ববাদী বাংলাদেশ।
সংখ্যালঘু উপাসনালয় ও ধর্মীয় উৎসব রক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তা টিম গঠন করা জরুরি।
হামিন্দপুরের দুর্গাপূজা মণ্ডপে হামলা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা ও মৌলবাদী সহনশীলতার ধারাবাহিকতা।
এই ধরনের আক্রমণ যদি দৃষ্টান্তমূলকভাবে দমন না করা হয়, তবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের প্রশ্ন চরম সংকটে পড়বে।
এখনই সময় রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ ভূমিকা থেকে সক্রিয় সুরক্ষা প্রদানের পথে এগিয়ে নেওয়ার।
