নীলফামারী ইপিজেডে শ্রমিক হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ভয়াবহ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে। শ্রমিকের রক্ত কেবল ন্যায্য মজুরির দাবি নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথেও গভীরভাবে জড়িত।
শ্রমিক যখন ভাতের জন্য রাজপথে নামে, তখন তা কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নয়, বরং বেঁচে থাকার লড়াই। নীলফামারী ইপিজেডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে এক শ্রমিকের মৃত্যু সেই লড়াইকে রক্তাক্ত করল। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল—রাষ্ট্র কি তার জনগণকে রক্ষা করবে, নাকি তাদের রক্তেই টিকে থাকবে?
এই হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
বাংলাদেশের শ্রম আন্দোলনের ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে—ন্যায্য মজুরি, ভাত, ও শ্রমিক অধিকার দাবি করতে গিয়ে শ্রমিককে রক্ত দিতে হয়েছে।
- শ্রমিকের মৃত্যু মানে শ্রমিক শ্রেণীর ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।
- ভাতের অধিকারকে গুলি দিয়ে থামানো মানে জনগণের মৌলিক অধিকার অস্বীকার।
- এই মৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার সমান।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শ্রমিক হত্যা আসলে রাষ্ট্রের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।
বিবৃতিতে যুক্ত হয়েছেন শতাধিক কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, গবেষক, মুক্তিযোদ্ধা ও মানবাধিকার কর্মী।
তাদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে একটি ঐক্যবদ্ধ সত্য—
“শ্রমিক হত্যার রক্ত ভুলে যাওয়া যাবে না।”
এ প্রতিবাদ প্রমাণ করে, শ্রমিকের রক্ত শুধু কারখানার ভেতরে সীমাবদ্ধ নয়; এটি আমাদের গান, কবিতা, নাটক ও শিল্পের ভেতরেও প্রবাহিত হয়।
শ্রমিক হত্যার ঘটনা কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়ে সীমাবদ্ধ নয়।
রাষ্ট্র যদি শ্রমিককে ন্যায্য মজুরি ও মানবিক অধিকার দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি সরকারের ব্যর্থতা।
দাবিগুলো ছিল স্পষ্ট:
হত্যাকারী বাহিনীর বিচার।
নিহত শ্রমিকের পরিবারের ক্ষতিপূরণ।
শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতকরণ।
দমননীতি ও গুলি বন্ধ।
এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে শ্রমিক আন্দোলন আরও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল শ্রমিক-কৃষক-জনতার মুক্তির শপথ নিয়ে।
অথচ আজ সেই শ্রমিকের রক্তে ভিজছে রাজপথ।
এই বৈপরীত্য স্পষ্ট করে যে—
- রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ভুলে গেছে।
- বর্তমান নীতি শ্রমিক শ্রেণীর শত্রুতার সমান।
- গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ফ্যাসিস্ট কৌশলে রূপ নিচ্ছে।
নীলফামারী ইপিজেডে শ্রমিক হত্যাকাণ্ড শুধু একটি প্রাণহানি নয়—এটি সমগ্র জাতির জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা।
যদি শ্রমিকের রক্তের বিচার না হয়, তবে এই দাগ ইতিহাসে অমোচনীয় হয়ে থাকবে।
সাংস্কৃতিক পরিষদসহ বৌদ্ধিক মহল যেভাবে ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছে, তা প্রমাণ করে—শ্রমিকের রক্ত আগামী দিনের সংগ্রামকে আরও শানিত করবে।
রাষ্ট্র যদি সত্যিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে, তবে তাকে শ্রমিকের ভাত ও জীবনের অধিকার নিশ্চিত করতেই হবে।
অন্যথায় ইতিহাস তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করবে।
