ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হলো ছাত্রদলের। এ নির্বাচনে সংগঠিত ও কৌশলী শিবির নিজেদের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের রাজনীতির হৃদপিণ্ড, যেখানে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সবসময় জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ভরাডুবির শিকার হয়েছে। আর এ সুযোগে সংগঠিত ও সুপরিকল্পিতভাবে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।
ছাত্রদলের ভরাডুবির কারণ
বিএনপি-ঘনিষ্ঠ ছাত্রদলের দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবার স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। দীর্ঘ সময়ের নিষ্ক্রিয়তা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং মাঠপর্যায়ে দুর্বল সাংগঠনিক উপস্থিতি তাদের ভরাডুবির প্রধান কারণ।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ছাত্রদল শুধু কেন্দ্রীয় রাজনীতির ছায়ায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় ক্যাম্পাসভিত্তিক বাস্তব কৌশল গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
শিবিরের কৌশল ও সংগঠিত উপস্থিতি
অন্যদিকে শিবির দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও গোপন তৎপরতার মাধ্যমে নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। বিভিন্ন হল ও অনুষদে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, প্রার্থীদের কৌশলগত নির্বাচন এবং ছাত্রদের মধ্যে সংগঠিত তৎপরতা তাদের জয় এনে দিয়েছে।
যদিও অতীতে শিবিরকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, এবার তারা ধীরে ধীরে নতুন কৌশলে মাঠ দখল করেছে।
রাজনৈতিক তাৎপর্য
এই ফলাফল শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির জন্যও একটি বড় সংকেত। ছাত্রদলের ভরাডুবি বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত।
একইসাথে শিবিরের পুনরুত্থান জাতীয় পর্যায়ে মৌলবাদী রাজনীতির প্রসার ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
কেউ কেউ ছাত্রদলের দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন, আবার অনেকে শিবিরের সাংগঠনিক তৎপরতা ও গোপন কৌশলের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
অনেকের মতে, এই ফলাফল ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও মুক্তচিন্তার পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কেবল একটি শিক্ষাঙ্গনের ভোট নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশক।
ছাত্রদলের ভরাডুবি এবং শিবিরের উত্থান আগামী দিনের রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করতে চলেছে।
এ ফলাফল প্রমাণ করে, যে সংগঠন মাঠে শক্তিশালী উপস্থিতি ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নিতে পারে, তারাই জয়ী হয়।
আর এ পরাজয় থেকে শিক্ষা নিতে না পারলে ছাত্রদল ধীরে ধীরে রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যেতে পারে।
