বাংলাদেশ সরকার মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তিতে ১ লাখ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে। পিটার হাসের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
সরকারের দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি: মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে ১৫ বছরের সমঝোতা
বাংলাদেশ সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি-র সঙ্গে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার এলএনজি আমদানির চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় আগামী ১৫ বছর ধরে ধাপে ধাপে বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করবে কোম্পানিটি।
চুক্তির আনুমানিক মূল্য সাড়ে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)।
পিটার হাসের ভূমিকা ও বিতর্ক
এলএনজি সরবরাহকারী কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজর হিসেবে কাজ করছেন পিটার ডি হাস, যিনি একসময় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
২০২২ সালের মার্চে দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি ২০২৪ সালের জুলাইতে চাকরি ছাড়েন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে তিনি কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান টার্মিনাল ঘুরে দেখেন এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এই বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, রাষ্ট্রদূত থাকার সময়ে তিনি যে কোম্পানির পক্ষে নীতিগত ভিত্তি তৈরি করেছিলেন,
বর্তমানে সেই কোম্পানিরই পরামর্শক হয়ে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক সুবিধা নিশ্চিত করছেন।
কীভাবে এলএনজি সরবরাহ হবে
চুক্তি অনুযায়ী,
- ২০২৬-২৭ সালে বাংলাদেশে আসবে ২৮টি কার্গো এলএনজি।
- ২০২৮ থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১৬টি করে কার্গো সরবরাহ করবে কোম্পানিটি।
- গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশকে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে এই এলএনজি আমদানিতে।
- এর বাইরেও আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে গেলে এক্সিলারেটকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এ পর্যন্ত কোম্পানিটি স্পট মার্কেটের মাধ্যমে প্রায় ৬৩৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৬টি কার্গো বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে। ভবিষ্যতে বছরে আরও ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বেশি স্পট কার্গো সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
কেন এই চুক্তি বহাল থাকল
এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি মূলত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের একাধিক বিশেষ চুক্তি বাতিল করলেও, এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এই চুক্তি বহাল রাখা হয়েছে।
কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হওয়ায় আইনগতভাবে বাতিল করা সম্ভব হয়নি।
অর্থনীতি ও নিরাপত্তা প্রশ্ন
এলএনজি আমদানির ফলে দেশের জ্বালানি সংকট কিছুটা প্রশমিত হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
একক বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে এমন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বাংলাদেশকে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
তাছাড়া, চুক্তির আর্থিক বোঝা আগামী প্রজন্মকেও বহন করতে হবে।
