বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখা যায়, সেনা বা সেনা-সমর্থিত সরকার এলে খুনি পাকি সহযোগী ও দেশদ্রোহীরা রাজনৈতিক মঞ্চে সক্রিয় হয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে তারা ব্যারাকের ভয়ে গর্তে লুকিয়ে থাকে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অনিবার্য দৃশ্য—যখনই সেনা বা সেনা-সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসে, তখনই খুনি পাকি সহযোগী ও দেশদ্রোহী শক্তিগুলো রাজনৈতিক মঞ্চে সক্রিয় হয়ে ওঠে। অথচ জনগণের গণতান্ত্রিক জাগরণ ও নির্বাচিত সরকারের আমলে তারা ব্যারাকের ভয়ে গর্তে লুকিয়ে থাকে। এই প্রবণতা শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার অর্জনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সেনাশাসনের প্রতিটি অধ্যায়—হোক তা জিয়া আমল বা এরশাদের সময়—প্রমাণ করে যে পাকিস্তানি দোসর, আলবদর-রাজাকার বা দেশবিরোধী গোষ্ঠীগুলো সুযোগ পেয়েছে রাজনীতির মাঠে ঘুরে বেড়ানোর।
তাদের পুনর্বাসন হয়েছে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়েই, এমনকি সংবিধান পরিবর্তন করে তাদের জন্য দরজা খোলা হয়েছে।
যখন সেনারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে, তখন জাতীয়তাবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের শক্তিগুলো চাপে পড়ে।
ব্যারাক-নির্ভর রাজনীতির ফলে গণতন্ত্রের জোর কমে যায়, আর তার সুযোগ নেয় দেশদ্রোহীরা।
সাধারণত সেনা-সমর্থিত সরকারগুলো আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বৈধতা অর্জনের জন্য দেশবিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে।
ফলে জনগণের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়, আর প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি মাথাচাড়া দেয়।
বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল স্বাধীনতার চেতনায়, যেখানে দেশদ্রোহী শক্তির কোনো স্থান নেই।
কিন্তু সেনা শাসনের ফলে বারবার দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে।
তারা শুধু রাজনীতি নয়, অর্থনীতি ও প্রশাসনেও প্রভাব বিস্তার করেছে।
এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জাতির আত্মপরিচয়ে গভীর আঘাত লেগেছে।
আজকের বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের দাবি—কোনো অবস্থাতেই যেন সেনা বা সেনা-সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় এসে দেশদ্রোহীদের পুনর্বাসনের সুযোগ না দেয়।
গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশবিরোধীরা ব্যারাকের ভয়ে গর্তেই থেকে যাবে।
তাই রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নাগরিক সমাজের দায়িত্ব হলো—ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সেনা-শাসনের প্রলোভনকে প্রতিরোধ করা।
সেনা শাসন শুধু গণতন্ত্রকে দুর্বল করে না, বরং দেশবিরোধী শক্তিগুলোর জন্য রাজনৈতিক মঞ্চ উন্মুক্ত করে দেয়।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অটুট রাখতে হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই একমাত্র পথ।
ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে—আর্মি ব্যারাকে গেলে দেশদ্রোহীরা যায় গর্তে, আর সেনা শাসন এলে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। জাতিকে এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
