ইরাকের আহ্বান — ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইসলামিক সামরিক জোট গঠনের প্রস্তাব এবং ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষণইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইসলামিক সামরিক জোট গঠনের আহ্বান জানালেন। বিশ্লেষণ: প্রস্তাবের কূটনৈতিক বাস্তবতা, অঞ্চলে প্রভাব ও সম্ভাব্য জটিলতা।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির সাম্প্রতিক বক্তব্য — “ইসরায়েলকে রুখতে ইসলামিক সামরিক জোট গঠন” — মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। কাতারে আয়োজিত বৈঠকের প্রেক্ষাপটে এ প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও তা বাস্তবায়নযোগ্যতা, অংশগ্রহণকারী দেশের স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। নিচে সেই প্রস্তাবের সম্ভাব্য প্রভাব ও বাস্তবিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হলো।
প্রথমত, ধারণাটির কূটনৈতিক লাভ-ক্ষতি পর্যালোচনা জরুরি।
আরব ও ইসলামিক বিশ্বের কিছু রাষ্ট্র আগে থেকেই প্রতিক্রিয়াশীল—মানবীয় সংকট বা সামরিক আক্রমণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমন্বয় করে।
তবে একটি স্থায়ী সামরিক জোট গঠন করতে জাতিগণের অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থ, সামরিক সক্ষমতা ও রাজনীতির সমন্বয় প্রয়োজন।
সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যेकিছু দেশের এখনই বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন স্বার্থ ও পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে — যা সামরিক ঐক্যকে জটিল করে।
দ্বিতীয়ত, কার্যকরীকরণে আইনগত এবং নীতিগত বাধা আছে।
জাতিসংঘ বা অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থার প্রেক্ষিতে জোটের কার্যকলাপকে আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে বিচার করতে হতে পারে।
কোনো আন্তর্জাতিক সামরিক উদ্যোগ তৎক্ষণাৎ অঞ্চলে আরও উত্তেজনা বাড়াতে পারে;
পক্ষান্তরে কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেলে রাজনৈতিক সমাধানের পথও খোলা থেকে যেতে পারে।
ফলে সামরিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের আগে কূটনৈতিক বিকল্পগুলোর মূল্যায়ন অপরিহার্য।
তৃতীয়ত, জোট গঠনের সম্ভাব্য নিরাপত্তা ও মানবিক ঝুঁকি।
দ্রুত সংগঠিত সামরিক কার্যক্রম আমাদের সাজানো নীতিগত নিয়ন্ত্রণ ছাড়িয়ে গেলে অঞ্চলব্যাপী সংঘাতের তীব্রতা বাড়তে পারে;
এতে বেসরকারি হতাহতের আশঙ্কাও থাকে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নিরাপত্তা ও সীমান্ত পরিস্থিতিও প্রভাবিত হবে।
চতুর্থত, পারস্পরিক ভরসা ও নেতৃত্বের অভাব, ইতিহাসে বহুবার অঞ্চলভিত্তিক সামরিক ব্লক কূটনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে।
কারণ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, লক্ষ্য ও কৌশলগত নির্ধারণ অনুপস্থিত থাকে।
এ ক্ষেত্রে তেল-রাজনীতি, রণনীতি ও বিদেশি শক্তির প্রভাবও হিসাব করে নিতে হবে।
অবশেষে, বাস্তবপন্থী পথ হিসেবে কূটনৈতিক সমন্বয়, মানবিক সাহায্য নিশ্চিতকরণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করে।
ইসরায়েলের ওই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর কৌশল খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
সামরিক জোটের বদলে রাজনীতি, কূটনীতি ও আইনকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান তৈরি করাই শ্রেয় হবে।
—অর্থাৎ ঝুঁকি ও ক্ষতির তুলনায় কূটনৈতিক চাপ ও বৈশ্বিক ঐক্যবদ্ধতাই বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে।
