বাংলাদেশের তথাকথিত ভারতবিরোধী রাজনীতি এখন ভণ্ডামির পরিচায়ক। ইন্টেরিম সরকার বিদ্যুৎ, রেল, পণ্য বাণিজ্য ও ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে আগের যেকোনো সরকারের চেয়েও বেশি ভারতনির্ভরতা দেখাচ্ছে।
-Prof,Dr.Arif
বাংলাদেশে ভারতবিরোধী স্লোগান কোনো নতুন বিষয় নয়। অতীতে অনেক রাজনৈতিক দল জনসমর্থন আদায়ের জন্য “ভারতভীতি”কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আজকের ইন্টেরিম সরকার যেভাবে ভারতপ্রীতি ও নির্ভরশীলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে, তা পূর্ববর্তী সরকারের সব রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—এতদিনের ভারতবিরোধী বক্তব্য কি শুধুই জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল ছিল?
অটল রয়ে গেছে পূর্বের চুক্তি
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নানা চুক্তি ও সহযোগিতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতায় আসার পরও কোনো চুক্তি বাতিল হয়নি। বরং বিদ্যমান সব চুক্তি বহাল রেখেই আরও নতুন নতুন চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নতুন সমঝোতা।
বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানিতে রেকর্ড নির্ভরতা
গত এক বছরে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ চাল, পেঁয়াজ, আলু ও কাঁচামরিচ ভারত থেকে আমদানি করেছে।
অভ্যন্তরীণ বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে ভারতকে দেওয়া হয়েছে ১২০০ টন ইলিশ।
এ ধরনের রপ্তানি সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে—বাংলাদেশের বাজার ও কূটনীতিতে ভারতের প্রভাব অপরিবর্তনীয়।
রেল ও অবকাঠামোতে ভারতীয় সম্পৃক্ততা
ইন্টেরিম সরকার ভারতের কাছ থেকে ২০০ রেলের বগি ক্রয় করেছে। পরিবহন খাতে এই নির্ভরশীলতা দেখায় যে অবকাঠামো উন্নয়নে ভারত এখন অন্যতম প্রধান অংশীদার।
ভুয়া প্রচারণা ও জনমত প্রভাবিতকরণ
কিছু বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক যেমন আসিফ নজরুল প্রচারণা চালিয়েছেন যে, ভারতীয় নাগরিকদের পুশব্যাক বা চাকুরিচ্যুতি ঘটেছে।
বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। বরং ভারতের প্রতি সদাচরণ ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।
ফলে বোঝা যাচ্ছে, এসব গুজব জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ছড়ানো হয়েছিল।
স্লোগানের পরিবর্তিত রূপ
একসময় রাজনৈতিক স্লোগান ছিল—“দিল্লী না ঢাকা”। আজ বাস্তবতা বলছে, স্লোগান বদলে দাঁড়িয়েছে—“দিল্লী ও ঢাকা”।
অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং নির্ভরতাই হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির নতুন ভিত্তি।
জনগণ এখন বুঝতে পারছে, ভারতবিরোধিতা আসলে ফাঁকা আওয়াজ।
বাস্তবিক অর্থে সব সরকার, বিশেষত ইন্টেরিম সরকার, ভারতের প্রতি নির্ভরশীল এবং ভারতকেন্দ্রিক নীতিতেই এগোচ্ছে।
