 
                  কাতারের দোহায় হামাস নেতাদের হত্যার ঘটনায় আরব দেশগুলো নতুন বাস্তবতা দেখছে। ইরানের চেয়ে ইসরায়েলই আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মূল হুমকি হয়ে উঠছে।
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বাস্তবতার সূচনা হয়েছে কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার মাধ্যমে। হামাসের শীর্ষ আলোচক ও কর্মকর্তাদের হত্যার ঘটনা শুধু একটি “টার্গেট কিলিং” নয়; বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
দোহায় হামলার গুরুত্ব
দোহা শুধু সমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাজতন্ত্রই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ন্যাটোবহির্ভূত কৌশলগত সহযোগী। এ ছাড়া এখানেই চলছিল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-হামাস আলোচনা।
এই পরিস্থিতিতে হামলা চালানো মানে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া—ওয়াশিংটনের মিত্রতা বা সামরিক ঘাঁটি আর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে আগাম হামলা ও সীমান্তের বাইরে আঘাত হানার যৌক্তিকতা তুলে ধরলেও এবারকার ঘটনা ব্যতিক্রম।
কারণ, কাতার বহুদিন ধরে গাজায় মানবিক অর্থ পাঠিয়ে অঞ্চলটিকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করেছে। ইসরায়েল বরাবরের মতো এটিকে হামাসকে শক্তিশালী করার অজুহাত হিসেবে উপস্থাপন করছে।
আরবদের নিরাপত্তা ভাবনায় পরিবর্তন
দশকজুড়ে উপসাগরীয় দেশগুলো আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ইরানকেন্দ্রিক ভেবে এসেছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, আঞ্চলিক মিত্রদের সহায়তা এবং সীমান্তের বাইরে আঘাত হানার ক্ষমতা নিয়ে তাদের আতঙ্ক দীর্ঘদিনের।
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার অভিযান, পশ্চিম তীরে দমননীতি এবং লেবানন-সিরিয়া-কাতারে একের পর এক হামলা পরিস্থিতিকে বদলে দিয়েছে।
এখন অনেক আরব রাষ্ট্র ইরানের আগ্রাসনকে পূর্বানুমানযোগ্য মনে করছে, কিন্তু ইসরায়েলকে দেখছে অস্থিতিশীলতার প্রধান উৎস হিসেবে। এই নতুন বাস্তবতা আরব দুনিয়ার কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশকে আমূল পাল্টে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
ট্রাম্প বা বাইডেন—কেউই ইসরায়েলের হামলা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হননি।
কাতারে হামলার পর স্পষ্ট হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইচ্ছুক নয় বা অক্ষম তার ঘনিষ্ঠ মিত্রকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
ফলে উপসাগরীয় শাসকেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।
সম্ভাব্য পরিণতি
- উপসাগরীয় দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে পারে।
- চীন ও তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব বাড়াতে পারে।
- ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার মুখে পড়তে পারে।
দোহায় ইসরায়েলের এই হামলা আঞ্চলিক রাজনীতিতে এক সন্ধিক্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এত দিন যেটি ইরানকেন্দ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো ছিল, সেটি এখন নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে।
আরব রাষ্ট্রগুলোর কাছে ইসরায়েলই আজ সবচেয়ে বড় অস্থিতিশীলতার কারণ।

 
                         
         
         
        