কানাডা বাংলাদেশ ভ্রমণে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। সম্ভাব্য সহিংসতা, হরতাল-অবরোধ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলায় ভ্রমণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশকে ঘিরে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে নিরাপত্তাজনিত সতর্কতা জারি হয়েছে, তা নতুন কিছু নয়। তবে কানাডা সরকারের সর্বশেষ ভ্রমণ নির্দেশনা বিষয়টিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। ১৮ সেপ্টেম্বর দেশটির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে—বাংলাদেশ ভ্রমণে তাদের নাগরিকদের “উচ্চ সতর্ক” থাকতে হবে। এমনকি সতর্কতার এক পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “সহায়তার জন্য পুলিশ স্টেশনেও যেন একা কেউ না যায়।” এ মন্তব্য নিছক একটি বাক্য নয়, বরং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যে অবিশ্বাস জন্মেছে, তারই প্রতিফলন।
কানাডা বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে হলুদ সতর্কতা (Exercise a high degree of caution) জারি করেছে।
এর মানে—নাগরিকরা চাইলে ভ্রমণ করতে পারেন, তবে ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
সম্ভাব্য বিক্ষোভ, হরতাল-অবরোধ, সংঘর্ষ ও অঘটনের কারণে সর্বত্র সতর্ক থাকার নির্দেশ।
এখানে লাল সতর্কতা (Avoid all travel) জারি করা হয়েছে।
অর্থাৎ ভ্রমণ একেবারেই নিষিদ্ধ।
কারণ হিসেবে রাজনৈতিক সহিংসতা, অপহরণ ঝুঁকি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতকে দায়ী করা হয়েছে।
একটি দেশের ভ্রমণ সতর্কতা কেবল বিদেশি নাগরিকদের জন্য ঝুঁকির বার্তা নয়, বরং তা ওই দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শাসনব্যবস্থার উপরও আন্তর্জাতিক মূল্যায়নের প্রতিফলন ঘটায়।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়লে নতুন প্রকল্পে আগ্রহ হারান।
শিক্ষার্থী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পরিবারগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
পর্যটন খাত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায়।
কক্সবাজার বা সুন্দরবনের মতো বিশ্বখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বিদেশি আগমন কমে যায়।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, হঠাৎ সংঘর্ষ এবং হরতাল-অবরোধের সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
- রাজনৈতিক সংস্কৃতি: দলীয় সংঘর্ষ এবং ক্ষমতার পালাবদলে সহিংসতার ঝুঁকি থাকে সবসময়।
- আইনশৃঙ্খলা: সাধারণ নাগরিকরা প্রায়ই বিচার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আস্থাহীনতার কথা বলেন।
- পার্বত্য চট্টগ্রাম: ঐতিহাসিকভাবে এটি সংঘাতপ্রবণ এলাকা। চুক্তি স্বাক্ষরের পরও সেখানে টানাপোড়েন থেমে নেই।
কানাডার সতর্কতা থেকে বাংলাদেশ সরকারের জন্য কয়েকটি শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ:
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থা পুনর্গঠন জরুরি।
সহিংসতা কমাতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন অপরিহার্য।
নৃগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আস্থা পুনর্গঠন এবং টেকসই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা।
বিদেশি দূতাবাসগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করা, যাতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়।
কানাডার এই সতর্কতা নিছক একটি কাগুজে ঘোষণা নয়; বরং এটি বাংলাদেশের চলমান সংকটকে আন্তর্জাতিকভাবে দৃশ্যমান করেছে।
একটি দেশের ভ্রমণ সতর্কতা আসলে সেই দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির প্রতিচ্ছবি।
তাই সতর্কতাকে অবহেলা না করে এটিকে নীতিগত সংস্কার, নিরাপত্তা জোরদার ও কূটনৈতিক উদ্যোগের সুযোগ হিসেবে নেওয়া উচিত।
নইলে ভবিষ্যতে আরও দেশ একই ধরনের নির্দেশনা জারি করলে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ও অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেতে পারে।
