বাংলাদেশসহ ৯ দেশের ওপর আমিরাতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। নিরাপত্তা, ভূরাজনীতি ও স্বাস্থ্য ইস্যুকে কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) হঠাৎ করেই বাংলাদেশসহ মোট ৯টি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নির্দেশনা শ্রমিক, পর্যটক এবং ব্যবসায়িক ভিসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ফলে আমিরাতে কাজের উদ্দেশ্যে বা ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত হতে চাওয়া লাখো মানুষের জন্য এই সিদ্ধান্ত বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলো হলো—
- আফগানিস্তান
- লিবিয়া
- ইয়েমেন
- সোমালিয়া
- লেবানন
- বাংলাদেশ
- ক্যামেরুন
- সুদান
- উগান্ডা
যদিও ইউএই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি, তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা তিনটি মূল কারণের কথা বলছেন:
- উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও বেআইনি কার্যকলাপ রোধে আরব আমিরাত দীর্ঘদিন ধরে কঠোর নীতি মেনে চলছে। কিছু দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
- উপসাগরীয় অঞ্চলে কূটনৈতিক টানাপোড়েন ও আঞ্চলিক রাজনীতির প্রভাবও এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে থাকতে পারে। বিশেষত লিবিয়া, ইয়েমেন ও লেবাননের মতো দেশগুলো ইতোমধ্যেই অস্থিতিশীলতার শিকার।
- কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমিরাত কঠোর প্রবেশ নীতি অনুসরণ করছে। যদিও বর্তমানে মহামারির প্রভাব কমেছে, তবুও সংক্রমণ প্রতিরোধের কৌশল হিসেবে কিছু দেশের ওপর বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক শ্রমিক আমিরাতে যান।
রেমিট্যান্স নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত।
ফলে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে—
নতুন শ্রমিক পাঠানো সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
যারা ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব বা বিনিয়োগের জন্য যেতে চেয়েছিলেন, তাদের পরিকল্পনা অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
যারা বৈধ ভিসা নিয়ে আমিরাতে ইতোমধ্যেই অবস্থান করছেন, তারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছেন না।
এই সিদ্ধান্তকে স্থায়ী নয় বরং অস্থায়ী ও পরিস্থিতিনির্ভর হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আমিরাত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।
অর্থাৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
বাংলাদেশসহ নয়টি দেশের ওপর আমিরাতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিঃসন্দেহে একটি বড় কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকেত।
এ সিদ্ধান্ত শুধু প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনে নয়, বরং বাংলাদেশি অর্থনীতির ওপরও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো—এটি কত দিনের জন্য কার্যকর থাকবে এবং বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক চ্যানেলে কতটা সক্রিয় হয়ে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে পারে।
