 
                  সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনির দাবি, মার্কিন ডিপস্টেট পলিসির বড় বাধা ছিলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে ডিপস্টেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে সম্প্রতি এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি। তার দাবি, “মার্কিন ডিপস্টেট পলিসিতে শেখ হাসিনা ছিলেন সবচেয়ে বড় বাধা। তাই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বাংলাদেশকে নতুন এক পরীক্ষাগারে পরিণত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।”
রনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও ভারতের সম্পর্ক এখন “দা-কুমড়ার মতো।”
অতীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং পরবর্তী ভূরাজনৈতিক কৌশল নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
রনির দাবি অনুযায়ী, বাইডেন প্রশাসন শেখ হাসিনাকে উৎখাতের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছিল।
কিন্তু এতে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব উপেক্ষিত হওয়ায় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
এমনকি ডোনাল্ড লু ও পিটার হাসকে চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য করার নেপথ্যেও ছিল মার্কিন-ভারত সমীকরণের জটিলতা।
রনি ১৯৫৩ সালের বার্মা অ্যাক্ট প্রসঙ্গ টেনে দাবি করেছেন, মার্কিন নীতি তখন থেকেই দক্ষিণ এশিয়ায় সীমান্তভিত্তিক বিভাজন ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরির কৌশল অনুসরণ করছে।
পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামে মিশনারিদের সক্রিয়তা, শান্তিবাহিনীর উত্থান এবং ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তি—এসবই বৃহত্তর মার্কিন ভূকৌশলের সঙ্গে সম্পর্কিত।
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও তিনি একই যুক্তি দেন।
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে সংকটকে দীর্ঘায়িত করেছে যাতে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক শক্তির খেলায় জিম্মি রাখা যায়।
রনির বক্তব্যে স্পষ্ট, শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা শক্তির নীতি বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিলেন।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, তার অপসারণের পর বাংলাদেশে কী ধরনের শক্তি টিকে থাকবে?
যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই “ডিপস্টেট বাংলাদেশ” গড়তে সক্ষম হবে, নাকি আঞ্চলিক বাস্তবতায় ভারতের অস্বীকৃতি সেই পরিকল্পনাকে আটকে দেবে?
আজকের বাস্তবতায় আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চীনকে প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশকে কৌশলগত ঘাঁটিতে পরিণত করতে চায়, সেখানে ভারত নিজেকে আঞ্চলিক নেতৃত্বে অগ্রাধিকার দিতে চায়।
ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এখন শুধু দেশীয় সংকট নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
গোলাম মাওলা রনির বক্তব্য বিতর্কিত হলেও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক ডিপস্টেট থিওরি, যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের প্রতিযোগিতা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ অমীমাংসিত প্রশ্ন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত বাস্তবতা বোঝার জন্য এই বিতর্কগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

 
                         
         
         
        