কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে তিন বছরের সন্তানের গলায় অস্ত্র ধরে মাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও লুট। ঘটনাটির সামাজিক, মানসিক ও রাষ্ট্রীয় বিশ্লেষণ। কেন বাড়ছে ধর্ষণ, কী সমাধান হতে পারে—পড়ুন বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশে ধর্ষণ আর যৌন সহিংসতা এখন কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এক গভীর সামাজিক সংকট। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ঘটে যাওয়া এক নারকীয় ঘটনাই তার সর্বশেষ উদাহরণ। ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে কয়েকজন দুর্বৃত্ত বাড়িতে ঢুকে স্বামী-দেবরকে বেঁধে ফেলে, আর তিন বছরের সন্তানের গলায় অস্ত্র ধরে ওই গৃহবধূকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, তারা ঘরের স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুট করেও নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীর সাহসী অবস্থান ও পরিবারের সহযোগিতায় ২২ সেপ্টেম্বর থানায় দুটি মামলা হয়—একটি ধর্ষণের মামলা, অপরটি লুটের মামলা।
এরই মধ্যে লাবু, তারিখ ও সুবেল নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তবে অপরাধে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে এখনও অভিযান চলছে।
বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে একাধিক নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।
জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে, কিন্তু শাস্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে কম।
এই দৌলতপুরের ঘটনাও আবারো প্রমাণ করছে, অপরাধীরা জানে—দুর্বল তদন্ত, দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় তারা শেষ পর্যন্ত পার পেয়ে যেতে পারে।
রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার জায়গায় প্রশ্ন উঠছে—কেনো এখনো গ্রামীণ নিরাপত্তা কাঠামো দুর্বল?
কেন গ্রামগঞ্জে অপরাধীরা এমন সহজে সংঘবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস চালাতে পারে?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও এই সমস্যা সমাধানে কেবল পুলিশি অভিযান যথেষ্ট নয়।
প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের কার্যকর ব্যবহার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
আইনের কঠোর প্রয়োগ – ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলাগুলোতে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করা জরুরি।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি – নারী নির্যাতনকে লজ্জার বিষয় নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিষয় হিসেবে দেখতে হবে।
ভুক্তভোগীর মানসিক পুনর্বাসন – ট্রমা কাটিয়ে উঠতে মানসিক সহায়তা ও কাউন্সেলিং জরুরি।
স্থানীয় নিরাপত্তা জোরদার – ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশিং সক্রিয় করা প্রয়োজন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ঘটনা আমাদের সামনে নির্মম বাস্তবতা হাজির করেছে।
নারী ও শিশুর নিরাপত্তা এখন কেবল আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তারও অংশ।
যদি আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ না নেই, তবে সমাজ ক্রমেই অমানবিক হয়ে উঠবে।
রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার—সবাইকে একসাথে দাঁড়াতে হবে।
