তাসনিম জারা প্রথমে অনলাইনে ইংরেজি টিপস দিতেন, পরে স্বাস্থ্য ও চর্ম-যৌন রোগ নিয়ে আলাপ শুরু করেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি ৫ আগস্টের রাজনৈতিক প্রজেক্টে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। আজ তিনি জামাতের সি-টিম টোকাই পার্টির নেত্রী।
বাংলাদেশের অনলাইন স্পেসে কিছু চরিত্রকে প্রথমে নিরীহ কিংবা আকর্ষণীয় মনে হলেও, সময়ের সাথে সাথে তাদের আসল মুখোশ উন্মোচিত হয়। তাসনিম জারা নামের এই তরুণীই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
প্রথম দিকে তিনি অনলাইনে ইংরেজি ভাষা শেখার টিপস দিতেন।
হাজারো তরুণ-তরুণী নিয়মিত তার ভিডিওতে ভিড় জমাতো।
এরপর শুরু হয় নতুন এক ধাপ—চর্মরোগ, যৌ*ন সমস্যা ও নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে আলাপ।
স্বাভাবিক কৌতূহল আর তথ্যের প্রয়োজনীয়তা কাজে লাগিয়ে তিনি তার ফলোয়ার বেইস গড়ে তোলেন।
কেউ ভাবতেও পারেনি, এর আড়ালে তিনি রাজনৈতিক প্রজেক্টের জন্য নিজেকে তৈরি করছেন।
হঠাৎ এক সময় দেখা গেলো, তার ভিডিওগুলো স্পন্সর করছে দেশের শীর্ষ টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোন।
ডান কোনায় কোম্পানির লোগো জ্বলজ্বল করছে।
অনলাইন উপস্থিতি মজবুত করতে এমন কর্পোরেট সাপোর্ট কেবলই কাকতালীয়?
নাকি এর পেছনে আরেকটি পরিকল্পনা লুকিয়ে ছিল?
তাসনিম জারার পথচলা অনেকটা মিল খুঁজে দেয় জামাত-ঘনিষ্ঠ বক্তা আমির হামজার সাথে।
হামজা যেমন ধর্মীয় ভাষণ দিতে গিয়ে মাঝেমধ্যে রাশমিকা, শাবনুর কিংবা ঐশ্বরিয়ার প্রসঙ্গ টেনে তরুণ-যুবাদের টানতেন, তেমনি জারা স্বাস্থ্য, প্রেম বা কসমেটিক্সের মতো বিষয় ব্যবহার করে কিশোর-তরুণদের আস্থা অর্জন করেছেন।
এই পদ্ধতি মূলত “আকর্ষণীয় প্রলেপে বিষাক্ত বার্তা ঢুকিয়ে দেওয়া”।
দিনের শেষে দেখা যাচ্ছে, আমির হামজা কুষ্টিয়া-৩ আসনে জামাতের প্রার্থী হয়েছেন আর তাসনিম জারা উঠে এসেছেন জামাতের সি-টিম—এনসিপি তথা টোকাই পার্টির নেতৃত্বে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক টার্নিং পয়েন্ট।
সেই প্রেক্ষাপটে অনলাইন-অফলাইনে একাধিক চরিত্রকে দেখা গেছে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে।
তাসনিম জারা সেই ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’-এর অংশ হিসেবে কাজ করেছেন—যেখানে লক্ষ্য ছিল তরুণদের আস্থা অর্জন করা, তারপর ধীরে ধীরে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ইনজেক্ট করা।
সম্প্রতি এই তাসনিম জারা ঘোষণা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না।
এ বক্তব্য শুধু একটি দলের প্রতি বিদ্বেষ নয়, বরং দেশের রাজনীতিতে একধরনের ফ্যাসিস্ট টোন।
যেভাবে তিনি তরুণদের মানসিক জগতে ঢুকেছেন, সেটি এখন রাজনৈতিক বিষ হিসেবে কাজ করছে।
তাসনিম জারাকে দেখে প্রথমে কেউ ভাবেনি তিনি একদিন টোকাই পার্টির নেত্রী হয়ে উঠবেন।
ইংরেজি টিপস থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সচেতনতার মুখোশে তিনি তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করেছেন, তারপর ধীরে ধীরে জামাতি রাজনীতির পথে টেনে নিয়েছেন।
এটি নিছক ব্যক্তিগত রূপান্তর নয়, বরং সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ডিজাইনের ভয়াবহ নমুনা।
আজ প্রশ্ন একটাই—আমরা কি সময়মতো এই ‘সাপের বিষ’ চিনতে পেরেছি?
নাকি আবারও প্রজন্মের ওপর আরেকটি বিষাক্ত প্রজেক্ট চাপিয়ে দেওয়া হলো?
