যশোরের শার্শায় অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রকে তুলে নিয়ে বলাৎকারের অভিযোগে যুবদল নেতা ও সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনি আটক। এ ঘটনা রাজনীতি, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতাকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
যশোরের শার্শা উপজেলায় এক ভয়াবহ ঘটনা আবারও সমাজে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলে দিল। মাত্র অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রকে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে বলাৎকারের অভিযোগে আটক হয়েছেন মনিরুল ইসলাম মনি—যিনি শুধু স্থানীয় প্রভাবশালী নন, বরং সাংবাদিক পরিচয়ের পাশাপাশি বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কও।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
বর্তমানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান এটিকে ‘জঘন্য অপরাধ’ আখ্যায়িত করেছেন।
এই ঘটনার ভয়াবহ দিক হচ্ছে—অভিযুক্ত ব্যক্তি শুধু রাজনৈতিক সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা নন, বরং সাংবাদিক পরিচয়ও বহন করেন।
রাজনীতি ও সাংবাদিকতা—দুটি ক্ষেত্রই সমাজে আস্থার জায়গা হওয়ার কথা, অথচ সেখান থেকেই বেরিয়ে আসছে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিক আচরণের দৃষ্টান্ত।
রাজনীতির মাঠে পদ ও প্রভাবশালী পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অনেকেই নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে চান।
যশোরের এ ঘটনাটিও যেন সেই চিরচেনা চিত্রের পুনরাবৃত্তি।
ভুক্তভোগীর বক্তব্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত মনি স্কুলে গিয়েই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
আরও উদ্বেগজনক হলো—মনির স্ত্রী একই স্কুলের শিক্ষিকা।
অর্থাৎ শিক্ষার্থীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল—বিদ্যালয়ই পরিণত হয়েছে ভয়াবহ অপরাধের প্রেক্ষাগৃহে।
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও যে ঝুঁকির মুখে রয়েছে, তা আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
এমন ঘটনায় শুধু আইনের শাসন নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নও সামনে আসে।
একটি কিশোর যখন তার স্কুল থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়, তখন পরিবার, স্কুল, সমাজ—সবকটিই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না।
একইসঙ্গে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে দায় এড়ানোর বদলে সৎ তদন্তে সহায়তা করা উচিত।
কিন্তু বাস্তবে আমরা প্রায়ই দেখি, অপরাধী যদি রাজনৈতিক পরিচয়ধারী হন, তবে তাকে বাঁচাতে চাপ সৃষ্টি করা হয়।
এ ধরনের অপরাধের শাস্তি যদি দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক না হয়, তবে এর পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব হবে না।
শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি সমাজকেও সচেতন হতে হবে।
অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব শুধু বক্তব্য দেওয়া নয়, বরং শিশুদের জন্য বাস্তব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
যশোরের ঘটনাটি আমাদেরকে সতর্ক বার্তা দিচ্ছে—শিশুরা কেবল অচেনা লোকের কাছেই নয়, বরং চেনা-পরিচিত, প্রভাবশালী, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত ব্যক্তিদের কাছেও নিরাপদ নয়।
রাজনীতি, ক্ষমতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের এই ত্রিমুখী চক্র ভাঙা ছাড়া শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
