মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষে আহত অন্তত ৩০জন বিএনপির নেতাকর্মী। প্রতিশোধমূলক রাজনীতি, মামলা বাণিজ্য ও আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার নগ্ন বাস্তবতা তুলে ধরছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পাল্টাপাল্টি হামলা ও প্রতিশোধমূলক রাজনীতি নতুন নয়। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর এলাকায় ফিরেই মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন। গুরুতর আহত চারজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাটি শুধুই একটি রাজনৈতিক সহিংসতা নয়—বরং এটি প্রতিফলন করছে বাংলাদেশের গ্রামীণ রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্ব, মামলা বাণিজ্য ও প্রতিশোধ সংস্কৃতির গভীরতাকে।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি কর্মীরা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের।
সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক গণ-মামলা হয়, ফলে তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।
সম্প্রতি নাজমুল, গিয়াস উদ্দিন ও মন্টু চেয়ারম্যান এলাকায় ফেরেন।
তাদের ফেরা ঘিরেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।
বুধবার সন্ধ্যায় হোসেন্দী ইউনিয়নের টান বলাকিচর এলাকায় সংঘর্ষ বাধে।
ইটপাটকেল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ভাঙচুরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিএনপি দাবি করছে, তাদের পার্টি অফিস ও একাধিক বাড়িতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, বিএনপি নাটক সাজিয়ে মামলা বাণিজ্যের ফাঁদ পেতেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার প্রবণতা দীর্ঘদিনের।
নির্বাচন, ক্ষমতার পালাবদল কিংবা আন্দোলনের পর রাজনৈতিক প্রতিশোধ প্রায় নিয়মিত।
আওয়ামী লীগ কর্মীরা অভিযোগ করছেন—তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়েছিল।
ফলে ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরতেই তারা প্রতিশোধ নিলেন।
বিএনপি বলছে—এটি ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের “প্রতিরোধের নাটক”, যা মামলার ব্যবসার অজুহাত মাত্র।
আইনের শাসনের দুর্বলতা এই দ্বন্দ্বকে উসকে দিচ্ছে।
থানায় লিখিত অভিযোগ না আসলেও হামলার মতো গুরুতর ঘটনায় পুলিশ কেবল “খতিয়ে দেখছি” বলে দায় এড়াচ্ছে।
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ভেঙে গেছে।
ফলে রাজনীতি পরিণত হচ্ছে প্রতিশোধ আর সহিংসতার খেলায়, যা গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে।
এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়।
এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি মানে শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী—সবার স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত।
রাজনীতির নামে যখন সহিংসতা রক্তাক্ত হয়ে ওঠে, তখন গ্রামীণ সমাজে ভয়, অবিশ্বাস ও বিভক্তি বেড়ে যায়।
গজারিয়ার সাম্প্রতিক সংঘর্ষ কেবল দুই দলের ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গভীর অসুখের প্রতিচ্ছবি।
মামলা বাণিজ্য, প্রতিশোধের রাজনীতি ও দোষ চাপানোর প্রবণতা যদি বন্ধ না হয়, তবে ভবিষ্যতেও এমন সংঘর্ষ চলতেই থাকবে।
সমাধান একটাই—আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতা ও সংলাপের সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
